গ্রীসে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত মমিন ও শাহীনকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায়

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি- সুন্দর ভবিষ্যৎ আর সোনালী দিনের স্বপ্ন নিয়ে ইউরোপের দেশে গিয়ে অবশেষে লাশ হয়ে দেশে ফিরলেন নবীগঞ্জের আব্দুল মমিন ও শাহীন মিয়া।

 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরে উপজেলার পূর্ব বড় ভাকৈর ইউনিয়নের কামড়াখাই গ্রামে পৃথক সময়ে পৃথক স্থানে নিহত দুজনের জানা যার নামাজ শেষে পরিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দুপুর সাড়ে ২টায় কামড়াখাই গ্রামের ঈদগাহে নিহত আব্দুল মমিনের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

 

এর আগে দুপুর ২টায় নিহত শাহীনের জানাযার নামাজ তার নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার হাজারো মানুষ। অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় মমিন ও শাহীনকে শেষ বিদায় জানান আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বন্ধব ও এলাকাবাসী। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

 

গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতের কোনো এক সময় ইউরোপের দেশ গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের আসপোগিরগো এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ওই দুই র‌েমিটেন্স যোদ্ধা। নানা আইনি জটিলতা কাটিয়ে রবিবার দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটে গ্রীস থেকে একটি বিশেষ প্লাইটে কার্গো যোগে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিহত মমিন ও শাহীনের মৃতদেহ দেশে পৌঁছায়। পরে বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর শেষে স্বজনরা মমিন ও শাহীনের মৃতদেহ গ্রহণ করেন।

 

ভোররাতে ঢাকা থেকে দুই র‌্যামিটেন্স যোদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি নবীগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন স্বজনরা। সকাল ১০টায় মমিন ও শাহীনের লাশ বহনকারী দুটি অ্যাম্বুলেন্স নিজ গ্রাম কামড়াখাই গ্রামে পৌঁছালে এলাকার নানা শ্রেণী পেশার মানুষ শেষবারের মতো মমিন ও শাহীনকে এক নজর দেখার জন্য তাদের বাড়িতে সমবেত হন। এসময় মমিনের অবুঝ তিন সন্তান রায়হান (১৭), ফাতেমা (১৪), জাহান (৯), স্ত্রী ও স্বজনদের আহাজারীতে এলাকার আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠে। কান্নায় বার বার মুর্চা যান নিহত মমিনের সন্তান,স্ত্রী,মা ও শাহীনের মা-বাবা। এলাকায় এক করুণ দৃশ্যের অবতারণ হয়।

 

এলাকার সবার মুখে একই ভাষ্য জানান, অবশেষে দেশে এসেছে মমিন ও শাহীনের লাশ, অসহায় এই দুটি পরিবারকে যেন সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করা হয়।

 

তবে সহায়তার প্রসঙ্গে প্রশাসন বলছে, প্রবাসী মমিন ও শাহীন যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তাদের সাথে গ্রীসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

উল্লেখ্য, পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে ও পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে গত ১৪ বছর পূর্বে প্রবাসে যান নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বড় ভাকৈর ইউনিয়নের কামড়াখাই গ্রামের আব্দুল মমিন (৪০) ও ৭ বছর পূর্বে প্রবাসে যান একই গ্রামের ন শাহীন মিয়া (২৫)। ইরান থেকে তুরষ্ক হয়ে গ্রীসে ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন আব্দুল মমিন ও ২ বছর ধরে গ্রীসে বসবাস করছেন শাহীন মিয়া। গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের আসপোগিরগো এলাকার একটি কন্টেইনার কোম্পানিতে পাহাড়াদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন মমিন ও শাহীন।

 

গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা একজনের মাথায় এবং অন্যজনের গলায় গুলি করে হত্যা করে। পরদিন সকালে স্থানীয়রা দুই মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।

 

সেখানে বসবাসরত প্রবাসীরা জানান, দু’টি কন্টেইনারে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় মমিন ও শাহীন বাঁধা দিলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ তদন্তে নেমেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *