ছাত্রনেত্রী থেকে ৪ বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নজর২৪ ডেস্ক- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। রাজনীতির সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় শেখ হাসিনা ছাত্রনেত্রী থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জননেত্রীতে। হয়েছেন রাষ্ট্রনেতা।

 

আজ তিনি শুধু আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা একজন সফল সরকারপ্রধানই নন, অসাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতীক। কেবল একজন জাতীয় নেতা নন, নিজ প্রজ্ঞা, মেধা ও বিচক্ষণতা দিয়ে রাষ্ট্রনায়কসুলভ ভূমিকায় নিজেকে তিনি বিশ্বনেতার কাতারে দাঁড় করিয়েছেন।

 

উপমহাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭১ বছরের ইতিহাসে টানা ৩৯ বছরই শেখ হাসিনা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অসংগঠিত ও ব্র্যাকেটবন্দি দলকে সুংগঠিত ও শক্তিশালী করেছেন। তার নেতৃত্বে দল অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী বলে দাবি দলটির। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মনে করে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা হলেন ঐক্যের প্রতীক।

 

গ্রামবাংলার ধুলোমাটি, সবুজ কোমল প্রকৃতি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেড়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শৈশবে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার একটি পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন শেখ হাসিনা। পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন তারা।

 

১৯৫৬ সালে টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন শেখ হাসিনা। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন জাতির পিতার পরিবার। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন শেখ হাসিনা।

 

১৯৬৭ সালে ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এ কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। তিনি এ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

 

১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় শেখ হাসিনার। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে পাকহানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গৃহবন্দি থাকেন শেখ হাসিনা। গৃহবন্দি অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করেন।

 

বিজয়ের পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্ত হন শেখ হাসিনা। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে শেখ হাসিনা জার্মানিতে স্বামীর কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে অবস্থানকালে তিনি পরিবারের সবাইকে হারানোর খবর পান।

 

তাত্ক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় শেখ হাসিনা ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ওই বছরেরই ১৭ মে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে মাতৃভূমিতে ফেরেন তিনি।

 

১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। সেই আন্দোলনে ১৯৯০ সালে এইচ এম এরশাদের পতন ঘটে। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন তিনি।

 

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। তার সরকারের আমলেই ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, সম্পাদিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি।

 

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ষড়যন্ত্র ও কারচুপির মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে।

 

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। তিনি বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ নেতা-কর্মী আহত হন।

 

এরপর ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনে অগণতান্ত্রিক সরকার দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চালানো হয়। সেসব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তারপর টানা তৃতীয় মেয়াদে এখন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

 

এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তখন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও প্রকট আকার ধারণ করে। দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে দল। ব্র্যাকেটবন্দি হয়ে একাধিক খণ্ডে পরিণত হয় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দলটি। এই পেক্ষাপটে নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালে দলের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের দায়িত্ব নেন।

 

এরপর থেকে এ পর্যন্ত টানা ৩৯ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় তিনি কাউন্সিলরদের ভোটে ৯ বার দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বের গুণে দলে নিজের একক অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। দলে এখন তার বিকল্প তিনিই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *