ধর্ম ও জীবন ডেস্ক: আমি জায়িনা। জ্ঞান-বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেওয়া ও মুক্তচিন্তায় অভ্যস্ত সিঙ্গাপুরের একটি আধুনিক পরিবারে আমার জন্ম। তাই শৈশব থেকে আমি বাস্তবতা ও বিজ্ঞানে বিশ্বাসী ছিলাম। এছাড়া আমাদের পরিবারে চীনা সংস্কৃতির প্রবল প্রভাব। কিন্তু মুসলিমদের পবিত্র কোরআনে আমি আমার সেই বৈজ্ঞানিক ভাবনা, চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি খুঁজে পেয়েছি। কোরআনে বিজ্ঞানের অনুকূল বহু আয়াত রয়েছে। আমার ইসলাম গ্রহণের পেছনে কোরআন পাঠের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
আমি গোপনে কোরআন পাঠ করতাম। একদিন মা আমাকে রুমের ভেতর কোরআন পড়তে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যান। এরপর কয়েক মাস দুজনের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল না। যখন তিনি বুঝতে পারলেন, আমাকে ইসলাম শেখা ও তার পরিপালন থেকে বিরত রাখতে পারবেন না, তখন এক রমজানে তিনি আমাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বললেন।
আমি তখন রোজাদার। ২০১৪ সালে ২৬ বছর বয়সে আমি ইসলাম গ্রহণ করি। সিঙ্গাপুরে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হওয়ায় ইসলামগ্রহণ আমার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জের ছিল। এছাড়া সেখানকার অনেকেই ভিন্নধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শন করেন না। তদুপরি মুসলমানের ধর্মবিশ্বাস হলো, পৃথিবীর সব শিশু মুসলিম হিসেবেই জন্মগ্রহণ করে। সে হিসেবে আমি কেবল নিজ ধর্মে ফিরে এসেছি।
আমার পরিবর্তন ও ইসলাম গ্রহণ মায়ের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। কেননা তিনি মুসলিমদের ব্যাপারে মিডিয়ার প্রচার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। প্রথমে ভাবলাম, ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকায় তিনি হয়তো পরিবর্তন মেনে নিতে পারছেন না। তাই তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আলোচনাগুলো ঝগড়া ও বিবাদে রূপ নিত। আমি বুঝে গেলাম বিষয়টি সমাধান হওয়ার নয়।
তাই আমার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে যাদের আপত্তি ছিল তাদের থেকে দূরে সরে গেলাম। চিন্তা করে দেখলাম, ইসলাম আমাকে একজন ভালো মানুষে পরিণত করেছে—এটা প্রমাণ করাই ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরার সর্বোত্তম পথ। আমি সে চেষ্টা করে গেলাম।
কিছুদিন পর তারা বুঝতে পারে, আমি আরো বেশি শ্রদ্ধাশীল হয়েছি। সব প্রতিকূলতার মধ্যে আমি শান্ত ছিলাম। কেননা আমার ভেতরে প্রশান্তি ছিল। সত্যিই ইসলাম আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে। ইসলাম একটি চমৎকার ধর্ম। ইসলামের সৌন্দর্য আমাকে শান্তি ও প্রশান্তি দিয়েছে। ইসলাম গ্রহণের কারণে পরিবারের সদস্যরা বিরূপ হলেও আমি এমন বহু মানুষ পেয়েছি, যারা সবাইকে উদার ও মুক্ত মনে গ্রহণ করতে পেরে আনন্দিত।
যখন আমি অন্যদের আমার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে জানালাম, তাদের বেশির ভাগই ছিল বিস্মিত ও আহত। তারা ঘৃণামিশ্রিত নানা প্রশ্ন ছুড়ে দিত। যেমন—তারা বলত, তুমি কি জানো না যে তুমি আর কখনো শূকরের গোশত খেতে পারবে না? তুমি কি জানো না যে তোমার স্বামী চারটি বউ রাখতে পারবে? তুমি কি জানো না যে ইসলাম একটি সন্ত্রাসী ধর্ম? আমি হাসিমুখে এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যেতাম।
এ ক্ষেত্রে কোরআনের একটি আয়াত আমার অন্তরের গভীরে প্রতিধ্বনিত হতো—‘ধর্মে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। বস্তুত সত্য পথ স্পষ্ট হয়ে গেছে অসত্য পথ থেকে।’ (আয়াত : ২৫৬, সুরা : বাকারা)।আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রতিটি মানুষকে জীবনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও জ্ঞান দেওয়া হয়েছে—সেটা ধর্মের ক্ষেত্রে হোক বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে। আপনি যদি চান মানুষ আপনার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না নিক, তবে আপনারও উচিত তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মন্তব্য না করা।
অ্যাবাউট- ইসলাম ও মিলিনিয়ালস অব সিঙ্গাপুর ইউটিউব চ্যানেল থেকে