আমাদের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করেন, আমি বড় অসহায়: এমসি কলেজের অধ্যক্ষ

নজর২৪ ডেস্ক- সিলেট মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সালেহ আহমেদ। তিনি বলেছেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের সনদ বাতিলের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তিই আমাদের প্রত্যাশ।

 

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে দেশের একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক সালেহ বলেন, অধ্যক্ষ হিসেবে আমি কলেজের সব কিছুরই জিম্মাদার। দায় তো আর আমি এড়াতে পারি না। কিন্তু, কোনো ঘটনা ঘটার আগে তো আর বলা যায় না যে এমন কিছু হবে। সারা বাংলাদেশের অবস্থা দেখছেন, আমাদের সমাজের অবস্থা দেখছেন।

 

তিনি বলেন, আমার কলেজের গেট বন্ধ ছিল। ছাত্রাবাসও বন্ধ। অনেক সময় ছাত্রাবাসের গেটে তালা দেওয়া থাকে, অনেক সময় থাকে না। কারণ, ওখানে অনেক শিক্ষক, কর্মচারী এবং তাদের পরিবার থাকেন। ঘটনার সময় হয়তো গেটটা তালা দেওয়া ছিল না। তারা ভেতরে ঢুকে গেছে। ওখানে আমার চার তলা ছাত্রাবাস আছে, পাঁচ তলার কাজ চলছে। ওই ছাত্রাবাসের শেষ মাথায় একটি টিলা আছে। ছাত্রাবাসের সামনের দিকে লাইট থাকলেও একদম পেছনের দিকে নেই। সেখানেই এই মেয়েটির সম্মানহানি করেছে তারা। এরা কলেজ থেকে পাশ করে বের হয়ে গেছে। এদের অধিকাংশই আমার শিক্ষার্থী না। সম্পৃক্ততার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে সেই ছয় জনের মধ্যে একজন বর্তমান শিক্ষার্থী, তিন জন পাশ করে বের হয়ে গেছে এবং দুই জন বহিরাগত ছিল।

 

অধ্যাপক সালেহ বলেন, আমার একজন কর্মচারী আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানায়। এটা রাত ৮টার দিকে। ঘটনাটি তো ঘটেছে সন্ধ্যার পরপরই। আমার কর্মচারী জানানোর পরে শাহ পরান থানার ওসি ফোন দিয়েছেন। তারা ছাত্রাবাসে ঢোকার অনুমতি চাইলে আমি তাদের বলি, আপনারা দ্রুত ভেতরে যান। আমার হোস্টেল সুপারেন্টেন্ড দুজন ছুটিতে আর দুজন সেখানে ছিলেন। তাৎক্ষনিকভাবে তাদের সেখানে পাঠাই। আমার শরীর একটু খারাপ ছিল। পুলিশ ভেতরে যাওয়ার একটু পরেই কলেজের একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং শিক্ষক পরিষদের সম্পাদকে সেখানে পাঠিয়েছি। তারা আমাকে জানান, তদন্ত চলছে, আপনার এখনই আসার দরকার নেই। পরে আমাকে যখন যেতে বলেন, তখন আমি রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে যাই এবং ভোররাত ৩টা পর্যন্ত সেখানে ছিলাম।

 

এক প্রশ্নের জবাবে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এই পুরনো ছাত্রাবাস ছয় কোটি টাকা দিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হলো (আগুন দিয়ে পুরিয়ে দেওয়া ছাত্রাবাসটি)। কিন্তু, দোষীদের শাস্তি দেওয়া হলো না। আপনার যে প্রশ্ন সেটা একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমারও প্রশ্ন। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তখন দেওয়া দরকার ছিল। সেটা করা হলে এমন ঘটনা আবার কখনও ঘটানোর তারা সাহস পেত না।

 

তিনি বলেন, আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা। এগুলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়, অনেক কিছু আছে যেগুলো বিচারিক আদালতের বিষয়, যেটা সরকারের বিষয়, সরকারি যে বিভিন্ন সংস্থা আছে তাদের বিষয়। অনেক কিছু তো আমাদের হাতে নেই। আমি কি বোঝাতে পারছি আপনাকে? আপনার প্রশ্ন আমি বুঝতে পারছি। আপনি আমার দিকটাও বেঝেন, আমার কী সীমাবদ্ধতা, আমি কতটা অসহায়। একটা কলেজের অধ্যক্ষকে ধরে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে আপনার মাধ্যমেই আমরা খবর পাই, টিভিতে দেখি। আমাদের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করেন।

 

এখন আপনার প্রত্যাশা কী? অপরাধীদের শাস্তি হবে? জানতে চাইলে অধ্যাপক সালেহ বলেন, আমার প্রত্যাশা হলো- এদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। আমার পক্ষ থেকে যতটুকু করার আমি করছি। সকালে অনেক সাংবাদিক আমার কাছে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একজন সিনিয়র সচিব আমাকে ফোন দিয়েছিলেন, তিনি আমার ঘনিষ্ঠজন। তিনি এই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। তাকে আমি বলেছি, আপনি তো একটি পর্যায়ে আছেন। এখানে জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আছেন। আমি এই কলেজে শিক্ষার্থী ছিলাম, এখন অধ্যক্ষ। এটা আপনারও কলেজ। আপনি আপনার অবস্থান থেকে কিছু করেন।

 

এই কলেজের অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন বড় বড় পর্যায়ে আছেন। তাদের অনেককে আমি ফোন করেছি। তারা তাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করার করবেন বলে কথা দিয়েছেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বতোভাবে চেষ্টা করছেন এদেরকে প্রথমে গ্রেপ্তার করতে। তারপর যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক এটাই আমার প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *