রংপুর ও লালমনিরহাটে পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরমে

সাইফুল ইসলাম মুকুল, রংপুর ব্যুরো- আশ্বিনের অকাল বন্যা রংপুর ও লালমনিরহাটেরর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আগের বন্যার ধাক্কা সইতে না সইতেই চতুর্থ দফায় টানা বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে লাখো মানুষ।

 

পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তা ধরলার তীব্র স্রোতে নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম বসতবাড়ি,আবাদি জমি। উজানের ঢল আর প্রবল বৃষ্টিপাতে তিস্তা ধরলা নদীর বুক ভরা পানিতে ভাসিয়ে নিচ্ছে কষ্টে গড়া বসতবাড়ী,ফসল গাছপালা। প্লাবিত করছে গ্রামের পর গ্রাম। সেই সাথে ভাঙ্গছে বাপ দাদার সুত্রে পাওয়া ভিটে-বাড়ি। ঘরবাড়ি আর গোছানো সংসার গুটিয়ে নিয়ে অনেকেই উচু যায়গায় নিচ্ছেন আশ্রয়। কেউ আবার শেষ সম্বল ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আশ্রয় নিয়েচ্ছেন রাস্তাঘাটে।

 

এদিকে গত ৩ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি কোন সাহায্য সহযোগিতা। বানভাসীদের দিন কাটাছে অনাহারে-অর্ধাহারে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়,আশ্বিনের অকাল বন্যায় রংপুর ও লালমনিরহাটের নদীবেষ্টিত নোহালী, কোলকোন্দ, লক্ষীটারী, গজঘন্টা, বালাপাড়া, মধুপুর, মহিষখোচা, গোকুন্ডা, গড্ডিমারী, খুনিয়াগাছ, ডাউয়াবাড়ি, কুলাঘাট, মোগলহাট,সানিয়াজান, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ ও বড়বিল ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। চতুর্থ দফার এই বন্যায় গত ৫ দিন এই তিস্তা ধরলার ভাঙ্গনে দেড় হাজার বসতবাড়িসহ প্রায় সহস্রাধিক একর আবাদি জমি ও নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে।

 

গত তিন দিনের টানা বর্ষন ও উজানের ঢলে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার সকালে তিস্তার পানি ব্যারেজ পয়েন্টে কমে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ও ধরলার পানি লালমনিরহাটের শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার, উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চতুর্থ দফার এই বন্যায় রংপুর অঞ্চলের নদী বেষ্টিত ৬৫৩ চরের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

 

গংগাচড়ার লক্ষ্মটারী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হায়দার আলী বললেন, আমরা জনপ্রতিনিধিরা কিছুই করতে পারলাম না, চোখের সামনেই গ্রামের পর গ্রাম নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে,কেউই আমাদের পাশে দাড়াচ্ছেন না, বানভাসীরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করলেও মিলছে না কোন সাহায্য সহযোগিতা। আমরা পানিবন্দি পরিবার খবর নেয়ার জন্য এসেছি। এলাকাগুলিতে জরুরিভাবে খাদ্য সহায়তার কথা জানালেন গংগাচড়া ত্রাণ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমান।

 

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানালেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর পাশে প্রশাসনের লোকজন সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। তিস্তার পানি বাড়া আকস্মিক, এটাই নদীর ধর্ম। ইতোমধ্যে কত পরিবার পানি বন্দি রয়েছে সেটার কাজ প্রনয়ন চলছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১শ ১৫ মেট্রিকটন চাল শুকনা খাবার দেয়া শুরু হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। আশা করছি কোন পরিবারের সমস্যা হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *