থানায় চোখবাঁধা যুবলীগ নেতা, ভিডিও নিয়ে হইচই

নজর২৪ ডেস্ক- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও নিয়ে হইচই পড়ে গেছে ফরিদপুরে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জিনসের প্যান্ট ও কোট পরা এক ব্যক্তির হাতে হাতকড়া। দুই চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা। তার সামনের চেয়ারে এক ব্যক্তি। তিনি বলছেন, ‘তোর কী হইছে। কে মারছে। আমি তো তোগের লোক না। তোগের লোক হলে থানায় থাকতে পারতাম। আমি এমপি নিক্সন চৌধুরীর লোক।’

 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওতে নিজের পরিচয় দেয়া ব্যক্তি হলেন পরিদর্শক আহাদুজ্জামান। তিনি সদরপুর উপজেলার চন্দ্রপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ওই পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্ব পাওয়ার আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন তিনি। আর ভিডিওতে হাতকড়া পরা ব্যক্তি হলেন ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আরাফাত।

 

গত সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আরাফাত তার নিজের ফেসবুক আইডিতে ভিডিওটি আপলোড করেন। এরপরই সেটি ভাইরাল হয়। এ ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান।

 

জেলার পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জামাল পাশাকে আহ্বায়ক করে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ এই কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম ও ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজী রবিউল ইসলাম।

 

যুবলীগ নেতা শেখ আরাফাত বলেন, গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কাউলিবেড়া এলাকা থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। হাতকড়া পরিয়ে গাড়ির মধ্যে চার পুলিশ সদস্য তাকে মারধর করেন। পুখুরিয়া এলাকায় তাকে ডিবি পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়া হয়। তখন তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। নানাভাবে ভয় দেখানো হয়। বলা হয়, ‘তোকে ক্রসফায়ারে দেব। সকালের সূর্য তুই দেখতে পারবি না। আজই তোর শেষ রাত।’

 

আরাফাত আরও বলেন, রাতে তাকে এসপির কার্যালয়ের তিন তলায় ডিবির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে চেয়ারে পিটমোড়া করে বাঁধা হয়। এরপর তার দুই পায়ে বেতের লাঠি দিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট পেটানো হয়। এরপর ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে আবার পেটানো হয়।

 

১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আহাদুজ্জামান বলছেন, ‘আমি তো তোগের লোক না। তোগের লোক হলে (ভাঙ্গায়) থানায় থাকতে পারতাম।’

 

আরাফাত বলেন, ‘আমাকে নির্যাতন করে ভিডিও করেছে যেসব কমর্কতারা তাদের আমি বিচার চাই, যাতে আর কোন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এভাবে নির্যাতন করা না হয়।’

 

আহাদুজ্জামান ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত ডিবির ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে সদরপুরের চন্দ্রপাড়া ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

 

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আরাফাতকে চোখবাঁধা অবস্থায় পেয়েছি। তাকে মারধর করা হয়েছে কি না জানি না। এর আগে আরাফাত আমাকে বলেছিলেন, আমি নাকি নিক্সন চৌধুরীর লোক। এর উত্তরে আমি বলেছি, নিক্সন চৌধুরীর লোক হলে আমি থানাতেই থাকতে পারতাম।’

 

মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘আরাফাত অনেক মামলার আসামি। বিষয়টি পরিকল্পনা করে হয়তো সাজিয়েছে। ওই ঘটনার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *