‘ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে সব অভিযোগের দায় তার ব্যক্তিগত’

নজর২৪- স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের কোনও পরিবহন পুল নেই, ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে উত্থাপতি সব অভিযোগের দায় তার ব্যক্তিগত। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানিয়েছেন।

 

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ‍শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধীনে গত বছরের ২৪ নভেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর গঠিত হয়। বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন সে বছরের ৩১ ডিসেম্বর মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। গাড়িচালক আব্দুল মালেককে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরে ন্যস্ত করা হয়।

 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আজ পর্যন্ত নবগঠিত স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর থেকে কোনও প্রকার কেনাকাটা, কর্মচারী নিয়োগ, পদায়ন বা পদোন্নতির কাজ করা হয়নি। কাজেই গাড়িচালক মো. আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর বা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কোনও প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের দায় তার ব্যক্তিগত।

 

এর আগে, গত রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়ার ৪২ নম্বর বামনেরটেক হাজী কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বাসা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার মালেককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও কয়েক রাউন্ড গুলি এবং দেড় লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তুরাগ থানায় দুটি মামলা করা হয়।

 

২১ সেপ্টেম্বর মালেককে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুই মামলায় তাকে সাত দিন করে তার মোট ১৪ দিনের রিমান্ড পাঠায় আদালত।

 

আবদুল মালেককে গ্রেফতারের পর তার অগাধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একজন গাড়িচালকের দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া বিশাল সম্পদের ফিরিস্তি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা রীতিমতো হতবাক হয়েছেন।

 

র্যা ব জানায়, রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়ার সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল এই মালেক। তার দাপটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান ও সম্পদের বিস্তর অসামঞ্জস্য উঠে এসেছে।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মালেকের ঢাকায় অন্তত চারটি ফ্ল্যাট, ১০টি প্লট, কামারপাড়ায় এক বিঘা জমি, বামনেরটেক এলাকায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর সাততলা বাড়ি (বাড়ি নং ৪২ হাজী কমপ্লেক্স), স্ত্রীর নামে একটি সাততলা বাড়ি, হাতিরপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে।

 

এ ছাড়া গবাদিপশুর বৃহৎ খামার, মাছের ঘের ও পরিবহন ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। হাতিরপুল ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেটের পেছনে নির্মাণাধীন মালেকের ১০ তলা বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবন।

 

এটি দেখাশোনা করেন তার ছোট ভাই আবদুল খালেক। খালেক অধিদফতরের পার শাখার পিয়ন হিসেবে কর্মরত। মালেকের বহু সম্পদ খালেকের স্ত্রীর নামে রয়েছে।

 

এখন পর্যন্ত চারটি বেসরকারি ব্যাংকে মালেকের নামে-বেনামে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব টাকা তার স্ত্রী, ভাই খালেক ও এক ভাতিজাসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের নামে রাখা হয়েছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী গাড়িচালক মালেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। জালটাকার ব্যবসা ছাড়াও এলাকায় চাঁদাবাজিতে জড়িত মালেক।

 

একজন গাড়িচালক হয়েও মালেক পাজেরো জিপ ব্যবহার করেন। তার রয়েছে তেল চুরির সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালকরা তেল চুরি করলে তার একটি অংশ মালেককে দিতে হয়। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়ন্ত্রণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *