নজর২৪ ডেস্ক- সৌদি আরবে অবস্থিত ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে ওই দেশের সরকার। এই রোহিঙ্গারা ৩০-৪০ বছর ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করছে এবং সৌদি আরব নিজেই এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গাকে নিয়ে গিয়েছিল। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট না দিলে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ৮০-৯০ এর দশকে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ নিজে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেন। এরপর তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তাদের কাজের সুযোগও দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। তাদের সন্তান-সন্ততি সৌদি আরবে জন্ম নিয়েছে, তারা আরবি ভাষায় কথা বলে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই এখন আর নেই। এখন হঠাৎ করে তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের চাপ প্রয়োগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সৌদি কর্তৃপক্ষের আরও বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু বাংলাদেশে এরই মধ্যে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আছে, অতএব রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল বিবেচনায় এদের বাংলাদেশেই পাঠানো হবে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার বাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক বিবেচনায় জরুরি আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের কোনোভাবেই বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই। তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতেই হবে এবং তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বহুমাত্রিক কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে বহু বছর ধরে চলা এ সংকটের স্থায়ী সমাধান। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে মনে করছে সৌদি। এটা খুবই দুঃখজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র।
সূত্র আরও জানায়, এ ধরনের চাপ খুবই বিব্রতকর। বাংলাদেশ সৌদি আরবকে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছে। যেন তারা বাংলাদেশের ওপর এ রকম অনৈতিক চাপ প্রয়োগ না করে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানান, সৌদি আরবের তৎকালিন বাদশা স্বপ্রনোদিত হয়ে এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে ৮০ ও ৯০ এর দশকে অনেক রোহিঙ্গাকে নিয়ে গেছেন। অনেকে সরাসরি গেছে। কেউ কেউ হয়তো বাংলাদেশ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এটি আমরা পুরোপুরি জানি না।’
তিনি বলেন, ‘এখন তারা বলছে ৫৪ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে আছে। তারা বলছে, এদের কোনও পাসপোর্ট নেই এবং কোনও কাগজ নেই। তারা আরও বলছে, এদের তোমরা পাসপোর্ট ইস্যু করো। আমরা বলেছি, যারা আগে পাসপোর্ট পেয়েছে এবং তাদের পাসপোর্টের কাগজ যদি থাকে তবে আমরা নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করবো। কিন্তু এরা যদি আমাদের লোক না হয়, তবে আমরা নেবো না।’
বাংলাদেশের নাগরিক না হওয়ার পরেও কীভাবে সৌদি আরব পাসপোর্ট ইস্যু করতে বলে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা আমি কী করবো, এটা মুশকিল।’
রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট না দিলে অন্য বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘জুনিয়র লেভেলে কেউ কেউ বলছে তোমরা যদি এদের না নাও বা পাসপোর্ট ইস্যু না করো তবে তোমাদের দেশ থেকে এত লোক আনছি, এটা আমরা বন্ধ করে দেবো এবং তোমাদের যে ২২ লাখ লোক আছে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক অবস্থান নেবো। এই কথাগুলি জুনিয়র লেভেল থেকে আমাদের বলা হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় এটি টিকবে না।’
পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি বিষয়টি দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু সৌদি আরবের কিছুটা তাগাদা আছে। তারা বলছে, নাগরিকত্বহীন কোনও ব্যক্তি তারা রাখবে না। তারা বলছে তোমরা এটি তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করো। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রায়ই তারা এ প্রশ্নটা তোলে।’