নজর২৪ ডেস্ক- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্ব দেশের স্বাস্থ্য খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ। তবে যাদের জন্য এই সংস্থা- সেই নাগরিকদের চিকিৎসাব্যবস্থা বা স্বাস্থ্যের হাল যেমনই হোক না কেন, অধিদপ্তর ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেরই ‘দুর্নীতির’ স্বাস্থ্য বেশ নাদুস নুদুস। স্বাস্থ্যের রস-মধু চুষে খেয়ে একেকজন রাতারাতি শূন্য থেকে কোটিপতি হয়ে গেছেন।
করোনা ভাইরাস মহামারীর এ সময়ে স্বাস্থ্য খাতের যে বেহাল চিত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠে আসছে এ খাতের অনেকের ভয়াবহ দুর্নীতির সব তথ্য।
শুধু আবজাল বা মালেক নয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী থেকে হাসপাতালের সচিব কে নেই কোটিপতির তালিকায়। দুর্নীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, উপরস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই দুর্নীতির সিন্ডিকেট আজ প্রাতিষ্ঠানিক রুপে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে ড্রাইভার মালেক গ্রেফতারের পর দুদক কার্যালয়ে এসে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, দুর্নীতিবাজরা অবৈধ সম্পদ রক্ষায় সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনীকে মদদ দিচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্যের ২১ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার পরিজনসহ ৪৩ জনের সম্পদ বিবরণী চেয়েছে দুদক। একদিনের ব্যবধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪৫ থেকে বেড়ে ৮৫ অস্বাভাবিক সম্পদশালী ও কোটিপতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে দুদক। এ তালিকায় নাম রয়েছে অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ড্রাইভার, অফিস সহকারী থেকে স্টোর কিপার। আবার সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কোটিপতি বনে গেছেন। প্রত্যেকের নামেই রয়েছে অস্বাভাবিক সম্পদ উপার্জন, বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ।
শত কোটি টাকার মালিক স্বাস্থ্যের ড্রাইভার মালেক গ্রেফতারের পর সামনে আসা দুর্নীতি করে কোটিপতি হওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকাটা বেশ লম্বা।
মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদকের সিনিয়র সচিব বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২১ কর্মকর্তা ও তাদের স্বজনসহ মোট ৪৩ জনের সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব দিলোওয়ার বখত বলেন, ৪৫ জনের তালিকার বাইরে পরবর্তীতে তিনটা বিষয় এসেছে। একটি হলো মাস্ক, পিপিই ও যন্ত্রপাতি। তারপর এসেছে রিজেন্ট ও জেকেজি এগুলো তদন্ত করতে গিয়ে আরও বিভিন্ন লোকের নাম এসেছে।
এদিকে দুদক কার্যালয়ে এসে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, দুর্নীতি দমনে এক সাথে কাজ করবে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেটের জেরেই দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের চিহ্নিত করতে গত বছর মাঠে নামে দুদকের গোয়েন্দা শাখা। দুদকের একজন পরিচালকের নেতৃত্বাধীন একটি টিম দীর্ঘ অনুসন্ধানে ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা তৈরি করে কমিশনে দাখিল করে। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে মাস্ক ও পিপিই ক্রয়ে দুর্নীতির দায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও সিএমএসডির কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ৭ জনের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজিকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের সুযোগ দেওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকসহ (হাসপাতাল) বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। সবমিলিয়ে দুদকের জালে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের ৬০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। যাদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদকালে যাদের নাম আসবে তাদেরও নজরদারিতে এনে অনুসন্ধান করা হবে বলে দুদকের কর্মকর্তারা জানান।