নজর২৪ ডেস্ক- স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণির সাধারণ কর্মচারী তিনি। চালান ডিজির গাড়ি। এ পদে চাকরি করেই অগাধ সম্পদের মালিক আব্দুল মালেক। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণে অর্থ গচ্ছিত আছে তার। অবশেষে রোববার ভোরে দেশব্যাপী বহুল আলোচিত-সমালোচিত এ কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
এরপরই আরও গুমর ফাঁস হচ্ছে। মালেকের স্ত্রীর নামে রাজধানীর দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি ৭তলা বিলাসবহুল ভবন, ছেলের নামে তুরাগে ১৫ কাঠা জমিতে ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুলে সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন রয়েছে। ঢাকায় তার ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে।
এদিকে বাবা আবদুল বারীর মৃত্যুর পর তার নামে মাজার বসিয়েও জায়গা দখল করারও অভিযোগ মালেকের বিরুদ্ধে। জানা যায়, আবদুল বারী পেশাগত জীবনে ছিলেন সচিবালয়ের পিয়ন। ২০০৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। এরপর তার নামে টঙ্গীর কামারপাড়া এলাকায় একটি মাজার গড়ে তোলেন তারই সন্তান স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক মো. আবদুল মালেক ওরফে বাদল।
মাজার শরীফের নাম দিয়েছেন শাহ সূফী আলহাজ আবদুল বারী মাইজভান্ডারী। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, জায়গাটি দখল করে মাজার বানানো হয়েছে। আবদুল মালেকের ছেলের বিলাসবহুল জীবন সম্পর্কেও অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, আবদুল বারী মাইজভান্ডারী নামে কাউকে চিনতেন না তারা। আগে এখানে একটি ডেইরি ফার্ম ছিল। এটির দেখাশোনা করতেন আবদুল বারী নামে একজন। তিনি সচিবালয়ে পিয়নের চাকরি করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর হঠাৎ করেই এখানে গড়ে উঠেছে মাজার। প্রথম দিকে কয়েকজন প্রতিবাদ করলেও পরবর্তী সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় আর কেউ কথা বলেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র বাবার নামেই নয়, বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জায়গা দখল করার জন্য নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করতেন আবদুল মালেক। তার সন্তান ইমন পড়াশোনা করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা মেট্রো-ল ২০-৯৫৪৪ নম্বর প্লেটের একটি গাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতো সে। র্যাব জানায়, অভিযানের সময় মালেকের ছেলের ঘর থেকে ইয়াবা সেবনের আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, মালেক দীর্ঘদিন অধিদফতরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য তার অন্যতম কাজ। কোনো কর্মকর্তা সুপারিশ না শুনলে তাকে ঢাকার বাইরে বদলিসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। নানা পন্থায় বিভিন্ন পদে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন নিজের ২৭ জন আত্মীয়কে। তার বিরুদ্ধে দুদকেও অভিযোগ আছে।
কর্মকর্তারা চক্ষুলজ্জার ভয়ে এসব বিষয় কখনও প্রকাশ করেননি। অধিদফতরের গাড়ির চালক হয়েও মালেক পাজেরো জিপ ব্যবহার করেন। স্বাস্থ্যের ক্যান্টিন প্রিয় পরিচালনা করেন তিনি। তার রয়েছে তেল চুরির সিন্ডিকেট। অধিদফতরের গাড়ির চালকদের তেল চুরির অংশ তাকে দিতে হয়।
মালেক নিজে গাড়ি চালক হলেও মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত একটা সাদা পাজেরো জিপ গাড়ি নিয়মিত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরও দুটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন।
র্যাব জানায়, আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেকের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে। র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, সম্প্রতি আমাদের প্রাথমিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর তুরাগ এলাকায় মালেকের (৬৩) বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, জাল টাকা ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, মালেক ওই এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। তার দাপটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ওর ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে।