নজর২৪ ডেস্ক- ‘আমি স্বাস্থ্য ডিজি হতে চাই না, আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা ডিজির ড্রাইভার হয়ে মরতে চাই, রিটায়ার্ড হতে চাই। আমি ডিজি হতে চাই না।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক মালেক গ্রেফতারের পর এভাবেই আক্ষেপের কথা শোনাচ্ছিলেন এক চিকিৎসক। তার কথাতেই উঠে আসে কতটা প্রভাবশালী ছিলেন অধিদফতরের এই গাড়ি চালক।
সেই চিকিৎসক আরো বলেন, মালেক ড্রাইভারের কারণে আমরা অফিসে আসতে পারতাম না। তার দলবল নিয়ে হয়রানি করত। বলতে গেলে ডিজি অফিসটা মালেকের বাবার অফিস।
মালেক এখন জেলে, তবু অধিদফতর জুড়ে যেন ছড়িয়ে আছে তার জাল। সহকর্মীরা অনেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। যারা কথা বলছেন, তারা গাইছেন গুণকীর্তন। তাদের দাবি, কেউ বিপদে পড়লে হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা আর চাকরি দিয়ে সাহায্য করতেন মালেক। তাহলে তার সেই ক্ষমতা বা টাকার উৎস ছিল কী? সেখানে নিরব তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
মালেকের মেয়ের জামাই অধিদফতরের ক্যান্টিন লিজ নিলেও এখনো তা পরিচালনা করা হয় সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী দিয়ে।
তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে মালেকের এত ক্ষমতার উৎস কী? একজন বলেন, যদি কোনো অধস্তন কর্মকর্তার এত প্রতিপত্তি হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেই কার্যালয়ের যে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছেন তার আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে থাকে।
আব্দুল মালেকের মেয়ে ও ভাই অধিদফতরের অফিস সহকারী পদে, ভাতিজা ও এক নিকটাত্মীয় অফিস সহায়ক পদে, ভাগ্নে ও ভায়রা ড্রাইভার বড় মেয়ের জামাতা ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন।
উল্লেখ্য, রোববার (২০ সেপ্টম্বর) ভোরে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র, জালনোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব-১’র একটি দল আব্দুল মালেককে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ টাকার বাংলাদেশি জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
তৃতীয় শ্রেণির সাধারণ কর্মচারী হয়েও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেক। জাল টাকার ব্যবসা ছাড়াও তিনি এলাকায় চাঁদাবাজিতে জড়িত। শুধু তাই নয়, গ্রেফতারের পর বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এদিকে গাড়িচালক আব্দুল মালেকের (৬৩) কাছে থেকে অস্ত্র ও জাল নোট উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা পৃথক মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এদিন তুরাগ থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুবেল শেখ আসামিকে আদালতে হাজির করে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পৃথক দুই মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।