সাইফুল ইসলাম মুকুল, রংপুর- রংপুর নগরীর মধ্যগনেশপুরে দুবোনকে হত্যার প্রধান আসামী মাহফুজার রহমান রিফাত রোববার রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
এদিন রাত ৮টায় নগরীর সেন্ট্রাল রোড এলাকায় অবস্থিত রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসি ক্রাইম মারুফ আহাম্মেদ। এ সময় উপ পুলিশ কমিশনার শহিদুল্লা কাওছার, কোতয়ালী থানার ওসি আব্দুর রশিদসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, নগরীর মধ্য গনেশপুর এলাকার দু বোন জান্নাতুল মাওয়া ও সুমাইয়া আখতার মীম চাচাতো জেঠাতো বোন তারা একই বাড়িতে আলাদা আলাদা ভাবে বাস করতো। মীমের সাথে নগরীর মধ্য বাবুখাঁ এলাকার এমদাদুল ইসলামের ছেলে মাহফুজার রহমান রিফাতের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। তবে মাঝখানে তাদের মধ্যে দুরত্বের সৃষ্টি হয়।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর রিফাত তার প্রেমিকা মীমকে মোবাইলে ফোন করে তার সাথে দেখা করতে চায়। এ সময় মীম রিফাতকে জানায় তার চাচাতো বোন জান্নাতুল মাওয়াদের বাসায় আসতে, কারণ তার বাবা-মা কুড়িগ্রামের উলিপুরে বেড়াতে গেছে। এ কথা জানার পর রিফাত রাত সাড়ে আটটার দিকে জান্নাতুল মাওয়ার বাসায় এসে তাদের ঘরে অবস্থান নেয়। এরপর মীমের ঘরে গিয়ে রিফাত মীমের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে।
পরে রিফাত মীমের কাছে জানতে চায় কেন তাকে বাদ দিয়ে অন্য ছেলেন সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে রিফাত ক্ষুব্ধ হয়ে মীমকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। এরপর তার লাশ ঘরের ফ্যনের সিলিংএর সাথে ওড়না দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে।
এরপর সে ঘর থেকে বের হলে জান্নাতুৃল মাওয়া রিফাতকে রাতে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চায় এবং মীম কোথায় জিজ্ঞাসা করে। অবস্থা বেগতিক দেখে রিফাত জান্নাতুল মাওয়াকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ভাঙ্গা কাঁচ দিয়ে মাওয়ার গলায় আঘাত করে। এরপর দু বোনের মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর রিফাত রাতেই ওদের বাসা থেকে বের হয়ে তার বন্ধু রংপুর সদর উপজেলার লাহিড়ির হাটের আরিফের বাসায় যায়। সেখানে রাত্রি যাপন করে পরের দিন বিকেলে বাসায় আসে।
পুলিশ জানায়, দুবোনের মৃত্যুর ঘটনা নগরীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রিফাতকে তার বাসা থেকে শনিবার বিকেলে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মীমকে ধর্ষণ করে হত্যা ও ছোট বোন মাওয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
রোববার সন্ধায় রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে রিফাত। পুলিশ জানায়, রিফাতের বন্ধু আরিফকে আটক করা হয়েছে। মীমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুবোন হত্যার রহস্য উদঘাটন করার দাবি করে।