লঞ্চে নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা, মিললো চাঞ্চল্যকর তথ্য

নজর২৪ ডেস্ক- ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি পারাবত-১১ লঞ্চের কেবিনের যাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস লাবনীর ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হয় মনিরুজ্জামান চৌধুরী (৩৪) নামের ওই ব্যক্তিকে।

 

গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামান চৌধুরী গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আবদুস শহীদের ছেলে। ঢাকার মীরপুর-১-এর দারুস সালাম প্রিন্সিপাল আবুল কালাম রোডের সরকারি কোয়াটার এলাকায় বসবাস করেন তিনি।

 

বরিশাল জেলা পিবিআই’র সদস্যরা ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পিবিআই সদস্যদের সহায়তায় গতকাল মঙ্গলবার মনিরুজ্জামান চৌধুরীকে দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির।

 

পুলিশ সুপার জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা থেকে বরিশালগামী পারাবত-১১ লঞ্চের ৩৯১ নম্বর সিঙ্গেল কেবিন থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লঞ্চের স্টাফরা কেবিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ওই কেবিনে গিয়ে দরজা খোলা অবস্থায় অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহ খাটের ওপর দেখতে পায়। তাৎক্ষণিক নৌ-পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তারা মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

 

সুরতহাল ও অন্য আলামতের ভিত্তিতে বিষয়টি হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার পরে তদন্তে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। পিবিআই তদন্তের প্রথমভাগেই অজ্ঞাত ওই নারীর পরিচয় জানতে পারে।

 

জান্নাতুল ফেরদৌস লাবনী নামে ওই নারীর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আদমপুর এলাকায়। যদিও তিনি ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে দুই সন্তান নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতেন।

 

এদিকে সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা ওই নারীর সঙ্গে লঞ্চে আগমন করা ব্যক্তির সন্ধানে নামে পিবিআই। একপর্যায়ে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

অপরদিকে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে লাবনীর ব্যবহৃত ওড়না, মোবাইলসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি মনিরুজ্জামানকে লঞ্চে যে শার্টটি পরিহিত অবস্থায় সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনিরুজ্জামানের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। লঞ্চযোগে রাতে বরিশাল যাওয়ার পথে কেবিনে তাদের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে লাবনীকে হত্যা করা করে সে। লঞ্চেটি বরিশালে পৌছলে মনিরুজ্জামান কৌশলে পালিয়ে বাসযোগে ঢাকা চলে যায়।

 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার মরিরুজ্জামান রাইড শেয়ারের চালক ছিলেন। এটি তার তৃতীয় বিয়ে। আর নিহত লাবনীরও আগে বিয়ে হয়েছিল।

 

লাবনীর পরিবারের দাবি, চাকরির প্রলোভনে গত রোববার ঢাকার সদরঘাট থেকে মনিরুজ্জামানের সঙ্গে লঞ্চযোগে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হন লাবনী। ওইদিন রাত ৯টা পর্যন্ত লাবনীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় তার বাবার।

 

তবে ওই দুজনের মধ্যে বিয়ে হয়েছিল নাকি পরকীয়া, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে আরও সময় লাগবে বলে জানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল সদর নৌ থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, এই ঘটনায় নৌ-পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *