আন্তর্জাতিক ডেস্ক- গেল ছয় মাসে ভারতের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় দু’গুণ। তবে পেঁয়াজের দামের কারণে আসন্ন বিহারের বিধানসভা ভোট এবং মধ্যপ্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচনে খেসারত দিতে নারাজ বিজেপি সরকার। তাই ঝুঁকি এড়াতেই সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মোদি সরকার।
কিন্তু মোদী সরকারের এই আচমকা সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। নয়াদিল্লি আচমকা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের বাজারে এক লাফে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
এরআগে গত বছর অক্টোবরে ভারত সফরে এসেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের আচমকা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মজা করে বলেছিলেন, ‘‘আমি তো রাঁধুনিকে বলেছি, এখন থেকে রান্নায় পেঁয়াজ বন্ধ করে দাও!’’
এদিকে গত সোমবার ভারতের এমন সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ সরকার দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বলা হয়, পেঁয়াজ রফতানিতে যেন বাধা না আসে। তবে দিল্লির যুক্তি, গত কয়েক মাসে যে পরিমাণ পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি হয়েছে, তাতে অভাব হওয়ার কোনও কারণ নেই।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
মোদী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে পেঁয়াজের বৃহত্তম পাইকারি বাজার লাসালগাঁওতে মার্চ মাসে ১৫০০ টাকা কুইন্টাল দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল। সেপ্টেম্বরে তা ৩ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। ফলে ভবিষ্যতে খুচরো বাজারে এর আঁচ পড়বে। খুচরো বাজারে এখন ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। জুন-জুলাইয়ে তা ২০ টাকা ছিল। এমনিতেই খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার সাড়ে ৬ শতাংশের উপরে।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটকের পেঁয়াজ চাষিদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, যখনই তাঁরা একটু ভাল দাম পেতে শুরু করছিলেন, তখনই সরকার পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করে দিল। ফলে দাম ফের পড়ে যাবে।
সিপিএমের সারা ভারত কিষাণ সভার নেতা অজিত নভলে বলেন, ‘‘গোটা দেশের পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে প্রতারণা করা হল। চাষিরা রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ জানাবেন।’’ আজ এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে দেখা করে চাষিদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, এর ফলে তো পাকিস্তানের মতো দেশ ভারতের বাজার গ্রাস করবে।
কিন্তু মোদী সরকার বিহার ভোটের আগে পেঁয়াজের দাম নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ। ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বে সচিবদের গোষ্ঠী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পেঁয়াজের দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হস্তক্ষেপ করা হবে।
পেঁয়াজের যথেষ্ট চাষ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে বীজ আমদানি করা হবে। আপাতত মুম্বই, দিল্লি, কলকাতা, হায়দরাবাদের মতো শহরের পাইকারি বাজারে সরকারি গুদাম থেকে ৫০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মাণ্ডি দরে বাজারে ছাড়া হবে।