নজর২৪ ডেস্ক- এক ধর্ষককে হাতেনাতে ধরে জনপ্রতিনিধির কাছে সোপর্দ করেছিলেন এলাকাবাসী। আটক সেই অপরাধীকে ছেড়ে দেন কাউন্সিলর। কারণ, ধর্ষক সেই কাউন্সিলরের নিজের ভাতিজা। শুধু তাই নয়, উল্টো বকাঝকা করেন ধর্ষিতা গৃহবধূকেই। পরে ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যা করেন দুই সন্তানের জননী গৃহবধু সখিনা বেগম (৩৫)।
সম্প্রতি ঘটনাটি রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার। এ ঘটনায় কাউন্সিলর লুৎফর রহমান মিশুসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত ধর্ষক মফিজুল ইসলাম পলাতক আছেন। খবর- ডয়চে ভেলে’র
গৃহবধূর স্বামী কামাল বলেন, আমি একটি পোশাক কারখানার কাভার্ড-ভ্যানের হেলপার হিসেবে কাজ করি। ঘটনার দিন অর্থাৎ গত বুধবার আমি চট্টগ্রাম ছিলাম। রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথাও হয় আমার। রাত পৌনে ২টার দিকে খবর পাই এলাকার মফিজুল ইসলাম ঘরে ঢুকে আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে। স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে কাউন্সিলরের কাছে নিয়ে গেছে। আর কাউন্সিলর আমার স্ত্রীকে বকাঝকা করে মফিজুলকে ছেড়ে দিয়েছেন। আমার স্ত্রী যদি দোষীও হয় তাহলে কেন আমার পরিবারকে জানালো না কাউন্সিলর। তার কারণেই আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, চাকরির কারণে অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে থাকেন কামাল হোসেন। সাড়ে ১৪ বছর বয়সী মেয়ে আর ৮ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন সখিনা। গত বুধবার রাতে ধর্ষণের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার আত্মহত্যা করেন তিনি।
রাতে মফিজুল যখন সখিনার ঘরে ঢোকেন তখন চোর চোর বলে চিৎকার করেন তিনি। তার চিৎকারে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী আকবর আলী ও মেরাজুল ইসলামসহ স্থানীয়রা। তারা মজিফুলকে হাতেনাতে আটক করে কাউন্সিলরের বাসায় নিয়ে যান। সাথে নির্যাতিতাও ছিলেন। সেখানেই সখিনাকে বকাঝকা করেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, জানান এলাকাবাসী।
সখিনার স্বামী কামাল হোসেন বলেন, ধর্ষক মফিজুল ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিশুর আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। এ কারণে তিনি তাকে ছেড়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন যদি আমাকে ওরা ৫ কোটি টাকাও দিতে চায় আমি নেব না। আমি ১৯ বছর ধরে সংসার করছি। আমার দুই সন্তান মা-হারা হয়ে গেল। টাকা দিয়ে তো আমি স্ত্রীকে ফিরে পাবো না।
নারী নেত্রী খুশি কবীর বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন নারী কখন আত্মহত্যা করে? যখন সে মনে করে, এই পৃথিবীতে তার আর বেঁচে থাকার অধিকার নেই। কারও কাছে সে আর বিচার পাবে না। এখনও আমাদের সমাজে নারীকে পণ্য মনে করা হয়। ফলে নারীরা নিজেদের চরম অনিরাপদ মনে করে। আমি এই ঘটনায় কাউন্সিলর ও ধর্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।
গোদাগাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি, ধর্ষককে ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষোভে-দুঃখে গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। আমরা ঘটনাটি জানার পরপরই কাউন্সিলরসহ আকবর আলী ও মেরাজুল ইসলাম নামে আরো দুজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছি। নিহতের বাবা মুন্তাজ আলী বাদি হয়ে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেছেন। এই মামলায় ধর্ষকসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আটক তিনজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দ্রুতই রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে। আর ধর্ষককে গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যহত থাকবে।