সাকিব নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় মুখ খুললেন এমপি শিখর

মাগুরা-১ আসনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনি এলাকায় চলছে আলোচনা। ওই আসন থেকে বাদ পড়েছেন আলোচিত সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর।

সাকিবের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে এলাকায় পক্ষে-বিপক্ষে অভিমত দিচ্ছেন অনেকেই। তবে তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন এমপি শিখর।

তিনি বলেছেন, ‘দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ ক্ষেত্রে আমার কর্তব্য হচ্ছে সাকিব আল হাসানকে সহযোগিতা করা।’

আরও পড়ুন-

বনানী বাদ দিয়ে নিজের ঠিকানা মাগুরা করতে ইসিতে সাকিবের আবেদন

যত দিন শরীর আছে তত দিন কাজ আছে: রচনা ব্যানার্জি

সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তাদের তিনি অনুরোধ করেছেন মিটিং ডেকে নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, ‘নেত্রী আমাকে নৌকা আমানত হিসেবে দিয়েছেন। বিভিন্ন জনসভায় আমার বক্তব্যে বার বার বলেছি। আমার অবস্থান একদম পরিষ্কার। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন না-ও দেন, আমি তার হাতে নৌকাটা ফেরত দিয়ে তারপর আমি রিলিজ নেব। সাকিব বা যেই হোক, যাকেই নৌকা দেবেন, আমি তার জন্য সর্বোচ্চটুকু করব।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা–১ আসনে (মাগুরা সদর ও শ্রীপুর) আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের অনুসারী।

২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইফুজ্জামান শিখর। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ছিলেন। তার বাবা মো. আছাদুজ্জামান মাগুরা-২ আসন (মহম্মদপুর-শালিখা) থেকে চারবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। পুরো মাগুরা জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার প্রভাব রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এবারও মনোনয়ন–দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন শিখরই। তবে শেষ মুহূর্তে সাকিব এসে সব হিসাব–নিকাশ উল্টে দিয়েছেন। এতে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারীরা।

এমন পরিস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে অনেকে তাকিয়ে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের দিকে। এমনকি, রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে মনোনয়ন ঘোষণার পর মাগুরা শহরে সাকিবের বাড়িতে অনেক সমর্থক ভিড় করলেও আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।

সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন কেনার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এটাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলেন। তাদের অনেকে মনে করেন, গত ১৫ বছরে মাগুরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন সাইফুজ্জামান শিখর। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগ—সব জায়গাতেই তার অনুসারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এমন পরিস্থিতে সাইফুজ্জামান শিখরকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যেতে পারেন।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকালে সাকিবের বাবা খন্দকার মাশরুর রেজা কুটিল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দার বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে সাকিবের জন্য কাজ করতে। আমরা সেই কাজই শুরু করেছি।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, ‘দলীয় বিবেচনায় কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবে আমাদের সেই প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করতে হবে।’

সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুণ্ডু বলেন, এ ব্যাপারে দলীয় সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চান না।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওহিদুর রহমানের মতে, সাকিবের মতো আন্তর্জাতিক তারকার মাগুরায় মনোনয়ন পাওয়ায় তিনি খুশি। এ সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুন-

আমেরিকায় মৌসুমীর ‘কন্ট্রাক্ট বিয়ে’!

ওমর সানীকে কানে কানে কী বললেন তানজিন তিশা?

তবে অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাখারুল ইসলাম শাকিল বলেন, ‘সাকিবের মনোনয়নে আমি সন্তুষ্ট নই। রাজনীতির মাঠে সে একেবারেই নতুন। তৃণমূল মানুষের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। এত অল্প সময়ের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ মাগুরা-১ আসনে সাকিবকে মনোনয়ন দেওয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়।’

শাখারুল ইসলাম বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্তের কারণে আগামী পাঁচ বছরে আমরা সাংগঠনিকভাবে অনেক পিছিয়ে যাব। কারণ রাজনীতির বাইরে জেলা সদরে অরাজনৈতিক ব্যক্তির মনোনয়নের ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সংগঠন। সাকিবের হঠাৎ মনোনয়নের ঘোষণায় এমন অবস্থা হয়েছে যে সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথাই বলা যাচ্ছে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *