দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘বাইরের থাবা এসেছে’ মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ বাঁচাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
ভোট আয়োজনের নানা পদক্ষেপের মধ্যে ‘বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ও তৎপরতা দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও উল্লেখ করেন সিইসি।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের প্রথমদিন ১০৫ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে দেশে এখন যে বিতর্ক, সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত। গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নির্বাচনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নির্বাচনের ফেয়ারনেসকে উপলক্ষ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে গেছে, এটি কাঙ্ক্ষিত ছিল না।’
‘যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে আমাদের কমান্ড করতে পারে, তিনি তাদের পাল্টা সেভাবে কমান্ড করতে পারি না’, মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘আমাকে বাঁচাতে হলে, আমার জনগণকে বাঁচাতে হলে, আমার গার্মেন্টসকে বাঁচাতে হলে, আমার সাধারণ জনগণকে বাঁচাতে হলে, যে দাবিটা আমাদের জনগণের এবং পাশাপাশি বাহিরের (বিদেশিদের)… ওরা খুব বেশি দাবি করেনি, ওদের একটাই দাবি যে— বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ফ্রি-ফেয়ার হতে হবে। কোনোরকমের কারচুপির আশ্রয় নেওয়া যাবে না।’
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা চোখে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে পাবলিক পারসেপশন জরুরি। জনগণকে বলতে হবে— নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হয়েছে। সাধারণভাবে জনগণ যদি এটি বলে, তাহলে সেটি হবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।’
অতিসম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং লক্ষ্মীপুর উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে সিল মারা হয়েছে। এতে ‘আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি’ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমরা সেটি প্রতিহত করতে পারি নাই। আমাদের প্রশাসন, নির্বাচন কর্মকর্তারা পারেননি। এটা লজ্জাকর। এই সিল মারাটাও কিন্তু আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে গেছে। এটা মন্দ সংস্কৃতি যে—পেশিশক্তি ব্যবহার করা, কালোটাকা ব্যবহার করা এবং এই ধরনের কারচুপি করা। দীর্ঘদিন ধরে চর্চার মাধ্যমে একটা অপসংস্কৃতির চর্চা হয়ে গেছে। ক্রমান্বয়ে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি। কমিশন থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।’
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্য করে সিইসি বলেন, ‘বিচার বিভাগের কাজ হলো স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ তৈরি করা। হয়তো পুরোপুরি সেটি নেই। তারপর দেশের মানুষ এখনো স্বাধীন রাষ্ট্রীয় কর্মচারী হিসেবে যাঁদের বিবেচনা করে থাকে তাঁরা হচ্ছেন বিচারক। মানুষের আস্থাটা বিচার বিভাগের ওপর বা বিচারকদের ওপর অনেক বেশি। নিজেকে স্বাধীন ভাবতে হবে। সেই জন্য জনগণের প্রত্যাশা, আমাদেরও প্রত্যাশা থাকবে—যে দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন সেখানে আপনাদের সেই সাহসিকতা এবং সততা দুটোই যেন থাকে।’