অবশেষে কমেছে গরুর মাংসের দাম, লাইন ধরে কিনছেন মানুষ

রাজধানীর বেশ কিছু বাজারে দাম কমেছে গরুর মাংসের। স্থানভেদে মাংস মিলছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। কোথাও কোথাও ৬০০ টাকার কমেও পাওয়া যাচ্ছে। তবে বেশির ভাগ বাজারেই আগের মতো ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।

ক্রেতা, বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে খাদ্যতালিকা থেকে মাংস বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন কম আয়ের মানুষ। অন্যদিকে, ভারত থেকে হাড়বিহীন বা ফ্রোজেন মাংস আমদানি হচ্ছে। যদিও ডলার-সংকটে আমদানি কমেছে। এসব কারণে মাংসের চাহিদা কমে গেছে। ফলে বিক্রি কমে যাওয়ায় কম মুনাফায় মাংস বেচতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা।

ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ বাজার থেকে ৫৮০ টাকা দরে গরুর মাংস কেনেন ক্রেতা নাদিম হোসেন। তিনি বলেন, ৬০০ বা এর নিচেও গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব মাংসে চর্বি বেশি থাকে।

এদিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের খলিল গোস্ত বিতানে ৫৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। আর তা কিনতে সকাল থেকে বাজারের ব্যাগ হাতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। কেউ ১ কেজি, কেউ ১০ কেজি, কেউ আবার এরও বেশি পরিমাণ গরুর মাংস কিনছেন। ভেজাল বা আগের জমানো মাংস মেশানোর সুযোগ নেই। কারণ দোকানের সামনেই জবাই হচ্ছে গরু। সেখানেই যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দোকানে তোলা হচ্ছে। আর মুহূর্তের মধ্যেই আস্ত গরুর মাংস শেষ হয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, উত্তর শাহজাহানপুরের খলিল ফার্নিচার গার্ডেনের পাশের ছোট দোকান ঘিরে মানুষের উপস্থিতি। পুরুষ-নারী পৃথক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক মানুষ। তার অপর পাশেই আরেকটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংস। কমলা রঙের টিশার্ট পরে কাজ করছেন দোকানের কর্মচারীরা। গরু আনা, জবাই, চামড়া ছাড়ানো, মাংস কাটা, বিক্রয়সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা শ্রমিক কাজ করছেন। দোকানটির স্বত্বাধিকারী খলিল নিজে উপস্থিত থেকে যাবতীয় কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন। ক্রেতার চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা আর চরম ব্যস্ততার কারণে কথা বলার সুযোগও পাচ্ছেন না। একটি গরু জবাইয়ের পর শেষ না হতেই আবারো আনা হচ্ছে পাশেই খুঁটিতে বেঁধে রাখা গরু। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুসারে একের পর এক গরু জবাই করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

দোকানের কর্মচারী আখতার হোসেন বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫টির মতো গরু জবাই হচ্ছে। ডিসকাউন্ট দেওয়ার পর মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি। মাংসের সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ কোনো লিমিট নেই। ১ কেজি নেওয়ার জন্য কেউ এলেও তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১০০-১৫০ টাকার মাংস অনেকে নিয়ে থাকেন। এই কার্যক্রমের ফলে গরিব মানুষও মাংস খেতে পারছেন। আমরাও সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছি।

সপ্তাহব্যাপী অফারের আজ চতুর্থ দিন। স্বাভাবিক সময় ৮০০ টাকা কেজি দরে এ মাংস বিক্রি করা হয় বলেও জানান তিনি।

ব্যস্ততার জন্য বেশি কথা বলার সুযোগই পেলেন না খলিল গোস্ত বিতানের মালিক খলিল হোসেন। শুধু বললেন, সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। ব্যবসা কম করে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে এই কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। যতক্ষণ সামর্থ্য হবে ততক্ষণ আমরা এই কার্যক্রম চালিয়ে যাব।

অপরদিকে স্বল্প দামে মাংস কিনতে পেরে খুশির কথা জানালেন ক্রেতারাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *