ফুলবাড়ীতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভাইফোঁটা উৎসব পালিত

আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁট।” এমন বিশ্বাসে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বুধবার (১৫ নভেম্বর) পালিত হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম উৎসব ভাইফোঁটা।

এ উপলক্ষে সকাল থেকেই হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়বাঙালি হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, বাংলা বছরের কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ( কালীপূজার দুই দিন পরে ) পালিত হয় এই ভাইফোঁটা উৎসবপ্রতিটি পরিবারের বোনেরা এই উৎসবকে ঘিরে তাদের বাবার বাড়িতে আসেন এবং ভাইয়েরা উপস্থিত হন বোনের আশির্বাদ নিতে। এই শুভ দিনটিতে বোনেরা উপোস থেকে ললাটে তিলক কেটে ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় পূজা করেভাই ছোট হলে ধান-দূর্বা দিয়ে বড় বোন আশীর্বাদ করে, দীর্ঘায়ু কামনা করেআর বড় ভাই হলে প্রণাম করে ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ গ্রহণ করে বোন। এই দিনটি ভাই বোনের মিলনের দিন হিসাবে পালিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। সব বোনেরা নিজের ভাইয়ের সু-স্বাস্থ্য, অমরত্ব, দীর্ঘায়ু কামনা করেন এই দিনটিতে। বর্তমানে সব সংসার খুব ছোট, কোনও পরিবারে ভাই আছে কিন্তু বোন নেই, আবার কোথাও উল্টোটা দেখা যায়, সেই ক্ষেত্রে ভাই-বোন পাতিয়ে এই উৎসবটি পালন করা হয়। এই সম্পর্কই যে অটুট বন্ধন হিসাবে থাকে সেই কামনা করা হয়।

পৌর শহরের বাসিন্দা তনুশ্রী সরকার বলেন, বাড়ির বড় মেয়ে হওয়ায় প্রতিবছর ছোট ভাইয়ের সু-স্বাস্থ্য, অমরত্ব, দীর্ঘায়ু কামনা করে ধান-দূর্বা দিয়ে ছোট ভাইদের আশীর্বাদ করে। উপজেলার রাঙ্গামাটি গ্রামের বাসিন্দ কুমারি অনিমা রানী, মৌমিতা রায় মেঘলা ও তন্ময় সরকার জানান, ভাইফোঁটা উৎসবে আনন্দে ভরে ওঠে বাঙালির ঘরদুয়ার। থালায় সাজানো নানারকম খাবার। তারপর উপহার দেওয়া নেওয়া। সাক্ষী থাকে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের অনির্বাণ শিখা এবং পরিবারের মানুষজন। এই দিনটিতে ঘরে-বাইরে ছড়িয়ে থাকে ভাইদের জন্য বোনেদের আর বোনেদের জন্য ভাইদের শুভকামনা এবং মঙ্গল আকাঙএই উৎসবের আরও একটি নাম হল যমদ্বিতীয়া। কথিত আছে, এই দিন মৃত্যুর দেবতা যম তার বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন। অন্য মতে, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়।

এসএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *