মাত্র ১ দিন পরেই মেয়ের বিয়ে। অথচ এখনও টাকা যোগাড় করতে পারেনি বাবা! টাকার জন্য ঢাকার এক আত্মীয়ের কাছে এসে শূন্য হাতে ফিরেছেন তিনি। সেই আত্মীয় টাকা না দেয়ায় বাড়িতে ফিরে শেষ সম্বল ভ্যান বিক্রি করে মেয়ে বিয়ে দেবেন সেই বাবা।
সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে সেই বাবা যেমন কেঁদেছেন, তেমন কাঁদিয়েছেনও হাজারও মানুষকে। অনেকে ওই বাবাকে সাহায্য করার জন্য খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ব্যাক্তিকে নিয়ে আসতে থাকে নানা বিরুপ মন্তব্য। শুরু হয় অনুসন্ধান।
সম্প্রতি সেই ব্যক্তিকে নিয়ে অনুসন্ধান করে দেশের অন্যতম একটি অনলাইন পত্রিকা। অনুসন্ধানে জানা যায়, তার নাম ওয়াহিদ মোল্লা। তিনি পাবনার বেড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের পাইখন্দ গ্রামের মৃত বাহের উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে। তারা সাত ভাই ও দুই বোন। ২০-২২ বছর আগে তার মা নূর খাতুন মারা যান। আর ১১ বছর আগে মারা যান তার বাবা।
নানা প্রান্তে এমন প্রতারণা করা ওয়াহিদ আগে থেকেই নেশাগ্রস্ত ও প্রতারক ছিল। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।
আজ রোববার (৫ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে পাবনার বেড়া পৌরসভার তার নিজ গ্রামের বাড়ি পাইখন্দতে গিয়ে এমন সব তথ্য পাওয়া গেছে। ছোটবেলা থেকেই তার প্রতারণা ও জীবনীর বর্ণনা দিয়েছেন তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
ওয়াহিদের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৮ বছর আগে বাড়ি থেকে হঠাৎ ফেরারি হন ওয়াহিদ। এর মধ্যে দু-একদিন এলেও শুধু রাতটুকুও থাকতেন। সর্বশেষ গত ৭ বছর আগে বাড়িতে এসেছিলেন পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২ শতাংশ জমি বিক্রি করার জন্য। সেই দিনই আবার বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকায় ফিরে যান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে পারিবারিকভাবে বেড়া পৌরসভার পায়না গ্রামে প্রথম বিয়ে করেন ওয়াহিদ। বিয়ের দেড় বছর পর একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয় তাদের। নেশাগ্রস্ত ও প্রতারক হওয়ায় বিয়ের শুরু থেকেই সংসারে অশান্তি চলতে থাকে। এরপর সেই স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান।
এর ছয় মাস পর বেড়ার চাকলা ইউনিয়নের পাচুরিয়াতে আরেকটি বিয়ে করেন ওয়াহিদ। স্বামী নেশাগ্রস্ত হওয়ায় বিয়ের ৪-৫ মাসের মাথায় দ্বিতীয় স্ত্রীও তাকে তালাক দিয়ে চলে যান। এরপর ওয়াহিদ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হন। এরপর গত ৭ বছর আগে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দুই শতাংশ জমি অসুস্থতার অজুহাতে বিক্রির জন্য বাড়িতে আসেন। তবে কয়েক ঘণ্টা পরই আবার চলে যান।
এদিকে, গত দুই-তিন দিন আগে মেয়ের বিয়ের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, এরপর সেই টাকা দিয়ে মদ খাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যকর পরিবেশ তৈরি হয়।
ভাইরাল হওয়া ওয়াহিদের ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই সে অন্যরকম ছিল। স্কুলে দিয়ে এলে সেখান থেকে কোথাও পালিয়ে যেত। কোনোভাবেই পড়াশুনা করাতে পারিনি। জেনেছি, বর্তমানে ঢাকার মিরপুরের হযরত শাহ আলীর মাজারে অধিকাংশ সময় থাকে। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করে। মাঝেমধ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন ও মাওনায় দিন অতিবাহিত করে।
ওয়াহিদের প্রতিবেশী ওসমান গনি বলেন, ছোটবেলায় তাকে ভালোই দেখছি। এরপর সে একপর্যায়ে মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে। যে কারণে পরপর দুটি বউ চলে যায়। এলাকা থেকে অনেক দিন আগে চলে গেছে। এখন আর কোনো খোঁজখবর নেই।
বেড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল রানা বলেন, আমরাও তাকে চিনতাম না। মেয়ের বিয়ের কথা বলে টাকা নিয়ে মদ খাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর আমরা জানতে পারি ওয়াহিদের বাড়ি আমাদের বেড়ার ৬নং ওয়ার্ডে। এরপর আমরা বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি সে আগে থেকেই মাদকাসক্ত ও আধাপাগল ছিল।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। তবে জেনেছি ঘটনাটি ঢাকায় ঘটেছে। তার বাড়ি যে এখানে সেটা জানতাম না। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে দেখা যায়—অসহায় এক ব্যক্তি তার মেয়ের বিয়ের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দরকার বলে জানাচ্ছেন। ভিডিওতে তিনি সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা বলেও পরিচয় দেন। ঢাকার এক আত্মীয়ের কাছে টাকা চেয়ে শূন্য হাতে ফিরেছেন জানালে মানবিকতা দেখিয়ে ভিডিও করা ব্যক্তি তাকে ৬ হাজার টাকা দেন।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের মানবিক কাজ করা ‘ক্লিন সিরাজগঞ্জ গ্রিন সিরাজগঞ্জ’ এর প্রতিষ্ঠাতা আশিক আহমেদ তার ফেসবুকে দুটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এসবের জন্য এখন মানবিক কাজ করাই দায়।
এমন প্রতারনা করলে মানবিক মানুষ ও মানবিক সংগঠনগুলো তাদের ভাল কাজের উপর আস্থা হারাবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। তাই অভিযুক্ত ওয়াহিদ মোল্লাকে আইনের আওতায় এনে উল্লেখযোগ্য শাস্তির দাবী সচেতন মহলের।