আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেও এরপর টানা দুই ম্যাচে বাজে হার বরণ করল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ব্যাটে-বলে ব্যর্থ টাইগাররা। আজ কিউইদের বিপক্ষে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে সাকিববাহিনী। অপরদিকে আসরে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচেই দাপুটে জয় তুলে নিল নিউজিল্যান্ড।
আজ শুক্রবার চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে খেলতে নামে দুদল। বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় ম্যাচটি শুরু হয়। যেখানে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ও ৪৩ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড।
হতাশার হলেও সত্যি, চলমান বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় রান। এর সঙ্গে চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামের অতীত পরিসংখ্যানও কিছুটা আশা জাগাচ্ছিল সাকিব আল হাসানদের। কারণ এই ভেন্যুতে প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় রান যে ২২৪, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা দলের গড় সংগ্রহ ২০৬। যদিও সেই সমীকরণ আর বাংলাদেশের জন্য খাটেনি।
ম্যাচজুড়ে কয়েক বার উইকেটের সুযোগ দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। তার ভেতর দুয়েকটা ছিল কঠিন, এরপর ক্যাচ-রানআউট মিলিয়ে সহজ সুযোগও বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারেনি। অথচ মাত্র ১২ রানেই প্রথম উইকেট হারানো কিউইরা বড় বিপদে পড়তে পারত। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথার উইলিয়ামসনের পর ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেলরা পথ হারাতে দেয়নি কিউইদের। আহত হয়ে ৭৮ রানে যখন উইলিয়ামসন ফিরছিলেন, তখন তাদের জয়ের আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল কেবল। তার আগে কনওয়ের সঙ্গে ৮০ এবং মিচেলের সঙ্গে তিনি ১০৮ রানের দুটি জয়ের ভিত গড়া জুটি গড়েন। শেষ দিকে দলের বড় জয় নিশ্চিত করেন মিচেল। এ ডানহাতি ব্যাটারের ৬৭ বলে ৮৯ রানের বিধ্বংসী অপরাজিত ইনিংসে ৪৩ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের হয়ে যথারীতি ইনিংস উদ্বোধনে নামেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। তবে শুরুটা ভালো করতে পারেনি টাইগার ওপেনাররা। ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরে গেছেন লিটন।
ট্রেন্ট বোল্টের বলে ম্যাট হেনরির তালুবন্দী হন এ টাইগার ওপেনার। ১ বলে শূন্য রান করেন তিনি। তার বিদায়ে দ্বিতীয় উইকেটে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংসের হাল ধরেন তামিম।
কিন্তু বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেন নি তরুণ এই ওপেনার ১৭ বলে ১৬ রান করে লকি ফার্গুসনের শিকার হন। দলীয় ৪০ রানের দ্বিতীয় উইকেট হারানো বাংলাদেশ ১২তম ওভারে আরো চাপে পড়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে হারিয়ে।
ফার্গুসনের করা শর্ট বলে পুল খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে বসেন মিরাজ। দলীয় ৫৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ শিবিরে আসা যাওয়ার মিছিল শুরু হয়। ১৩তম ওভারে টাইগারদের চাপে রেখে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৮ বলে ৭ রান করে গ্লেন ফিলিপসের শিকার হন তিনি। তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ৯৬ রানের জুটিতে ম্যাচের হাল ধরে বাংলাদেশ।
তবে দলীয় ১৫২ রানে সাকিব ব্যক্তিগত ৪০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। মুশফিকুর রহিম দারুণ অর্ধশতক তুলে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ম্যাট হেনরির বলে ব্যক্তিগত ৬৬ রান করে বোল্ড হন তিনি। তাওহীদ হৃদয়ও ক্রিজে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ফলে আবারো ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। ১৫২/৪ থেকে ১৮০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে অলআউটের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় বাংলাদেশ।
তবে অষ্টম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাসকিন আহমেদের ব্যাটে ২০০ রান পার করে টাইগাররা। শেষ দিকে অভিজ্ঞ রিয়াদের রানের ইনিংসে লড়াকু পুঁজি পায় বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ রান। টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন মুশফিক। কিউইদের হয়ে ৩টি উইকেট নেন লকি ফার্গুসন।