অনেক দিন থেকেই বিনোদন জগৎ থেকে দূরে আছেন এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা ওমর সানী। বর্তমানে তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসা ও পরিবার নিয়ে। তবে এ অভিনেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব। ফেসবুকে নানা সময় নানা ঘটনা নিয়ে লিখতে দেখা যায় এ অভিনেতাকে। এরই ধারাবাহিকতায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ঢাকাই সিনেমার এ অভিনেতা।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ওমর সানী। পোস্টে অভিনেতা লেখেন, ‘সাধারণ মানুষ কি খাবে বলে দেন সরকার। খাবারের লিস্ট দিয়ে দেন আমরা কি খাব, আর পারছি না। রাষ্ট্র।’
ওমর সানীর ‘চাপওয়ালা’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে। এ ব্যবসা করতে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের লাফিয়ে বাড়ার ব্যাপারটি আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন তিনি।
তবে হঠাৎ তাঁর এমন পোস্টের কারণ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মানুষ বাঁচবে কীভাবে। খাবেটা কী? এমনটা তো ছিল না। কেন এমনটা হলো। বাধ্য হয়েই লিখলাম।’
ওমর সানী মনে করছেন, তিনি তো আর জনে জনে গিয়ে কথাগুলো বলতে পারবেন না। তাঁর জানানোর জায়গা ওই একটাই। নিজের ফেসবুক। সেখানেই তাই নিজের যাবতীয় উপলব্ধির কথা বললেন তিনি।
ওমর সানীর কাছে প্রথম প্রশ্ন ছিল, আপনার এই উপলব্ধি কত দিনের? উত্তরে যা বললেন, তা হচ্ছে, ‘এটা তো অনেক দিনের। রেস্টুরেন্ট ব্যবসার শুরুতে যে মেনু তৈরি করেছি ৩২ টাকায়, পাঁচ থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে তা এখন ৭০-৭৫ গেছে। ভারতীয় গরুর মাংস তো বিক্রি করতে পারি না। দেশি গরুর মাংস দিতে হয়। কারণ, আমি নিজে যেটা খেতে পারব না, সেটা তো অন্য মানুষদের খাওয়াতে পারব না। বাড্ডার যেখান থেকে গরুর মাংস নিতাম, শুরুতে ৫৫০ টাকা কেজি, সেটা এখন ৮০০ টাকা কেজিতে দাঁড়িয়েছে!’
কথায় কথায় ওমর সানী বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, আল্লাহ আমাদের ইলিশ মাছ দান করেছেন। এটা চাষ করা লাগে না। অনেকটা গাজীপুরের শালবনের মতো। আমরা দুজন আয় করা মানুষ, সেই আমাদের যদি এত হিসাব করে চলতে হয়, এ দেশের আর সাধারণ মানুষেরা কী অবস্থায় আছে! ভাবলেই যেন অস্থির লাগে। দম বন্ধ হয়ে আসে। একসময় পাঙাশ মাছ ছিল গরিবের খাবার। সস্তা। সেই পাঙাশের দামও এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে, কেজি ২০০ টাকার ওপরে। এদিকে ইলিশ কলকাতায় গিয়ে নাকি এক হালি পাওয়া যায় এক হাজার টাকার মধ্যে। যে ইলিশের জন্ম আমাদের এখানে, সেটা তো আমরা পুঁটি মাছের দামে পাব, তাই না। কিন্তু হচ্ছেটা কী, ইলিশের দাম যেন আগুন, হাত দেওয়া যায় না! আমার দেশের রাজশাহীর আম যদি আমেরিকায় ২০ ডলারে কিনতে হয়, তাহলে মেনে নেওয়া যায়। কারণ, আমেরিকায় গিয়ে খাচ্ছি। এটা স্বাভাবিক, সেটাও বুঝি। কিন্তু বিষয়টা মোটেও এমন না যে আমরা কিছুই বুঝি না। স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সাধারণ ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আমাদের যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পাওয়ার কথা, সেসব নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কেন!’
এটা কি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করতে গিয়ে উপলব্ধি হয়েছে? এমন প্রশ্নে ওমর সানী বলেন, ‘বিষয়টা মোটেও এমন না। আমরাও তো কামাই করে খাই। বাজারে যেতে হয় আমাদের। আমাদের সংসার আছে। আমাদের আয়ের উৎস তো আর অন্য কিছু না। কাজ করে যা আয় করি, তা দিয়ে খেতে হয়। চলতে হয়। সেই আমাদেরই যদি হিসাব করতে হয়! আল্লাহর রহমতে গত ২৫ বছরে আমরা হিসাব করিনি। আল্লাহ সামর্থ্য দিয়েছেন। চলে গেছি। কিন্তু দুই থেকে তিন বছর ধরে হিসাব করে যাচ্ছি। হিসাব করে খাচ্ছিও।
নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। একদমই বাইরে। আমরা ভাই দল করি না, কিছুই করি না। রাষ্ট্র কে চালাইল, কীভাবে চালাইল, সেটাও আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা চাই, রাষ্ট্র আমাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দিক। আমরা একেবারে সাধারণ মানুষ। নিজেদের ভিআইপি মনে করি না। রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ বলতে পারেন। এই রাষ্ট্র আমার, আমার বাপের, আমার চৌদ্দগুষ্টির। তো রাষ্ট্র কেন আমাদের পরিচালনা করতে ব্যর্থ হবে! মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে কেন জিম্মি থাকতে হবে রাষ্ট্রকে।’
আপনার চাওয়াটা কী? এমন প্রশ্নে সানী বললেন, ‘আমি সাধারণ একজন মানুষ। আমার আর চাওয়া। আমার আর পাওয়া। তারপরও বলতে গেলে বলতে হয়, আমার একটাই চাওয়া—সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস একেবারে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা।’