আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি বাজারের শচীন সাহার স্ত্রী ববিতা সাহা। বয়স প্রায় পয়ত্রিশ। অসুস্থ স্বামী ও শাশুড়িসহ সন্তানদের নিয়ে ববিতা সাহার সংসার।
তার পরিবারে বড় ছেলে কৌশিক সাহা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী, ছোট ছেলে কর্ণ সাহা দ্বিতীয় শ্রেণির। এ ছাড়াও তার দুই বছর বয়সি অনুরাধা সাহা নামের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। দশ গ্রামের লোক তাকে চেনে ববিতা বৌদি নামে। আট-দশজন নারীর মতো নয় তার সাংসারিক জীবন। তিন সন্তানের এই জননী চা-বিস্কুট, মিষ্টি-জিলাপিসহ বিভিন্ন প্রকার ভাজা-পোড়া বিক্রি করে সংসারের খরচ যোগান। দোকানের নাম ‘মা লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। স্বামীর হাতে গড়া এই মিষ্টির দোকান এখন সামলাতে হচ্ছে তাকেই। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরেছেন তিনি।
জানা যায়, স্বামী শচীন সাহা করতেন অন্যের হোটেলে দিনমজুরের কাজ। পরে ২০০৯ সালে খয়েরবাড়ি বাজারে তিনি নিজেই দেন একটি ছোট চায়ের স্টল। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে দাঁড়িয়ে কাজ করায় শচীন সাহার পা প্রায় সময় ব্যথা করত। কিন্তু তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে দিন কাটাতেন। একপর্যায়ে ব্যথা সীমাহীন হলে তিনি আর দোকান করতে পারেন না। পরে তার স্ত্রী ববিতা সাহা দোকানের দায়িত্ব নিয়ে দোকানটি পুরনায় চালু করেন। পরে অর্থ জোগানসহ, ঋণ ও বাড়ির জায়গা বন্দক রেখে ভারতের বেঙ্গালুরে নিয়ে যান স্বামীকে। যা অর্থ নিয়ে গিয়েছিলেন তা দিয়ে সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। সেখানের ডাক্তার তাদের জানান যে, শচীন সাহার হিপ জয়েন্ট ক্ষয় হয়ে গেছে। এর জন্য প্রয়োজন অপারেশন। কিন্তু অর্থ না থাকায় ববিতা অপারেশন ছাড়াই স্বামীকে নিয়ে দেশে ফেরেন। পরে আর হয়ে ওঠেনি স্বামীর চিকিৎসা। এরপর থেকেই অসুস্থ স্বামী, শাশুড়িসহ সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে নিয়মিত দোকান চালাচ্ছেন ববিতা সাহা। ববিতা সাহার ওই দোকানে মেলে চা, বিস্কুট, মিষ্টি, জিলেপিসহ বিভিন্ন প্রকার ভাজাপোড়া। সেই দোকান থেকে আয়ের অর্থ দিয়ে ঋণ-দেনা শোধ করেন ববিতা। বাড়ির বন্দক রাখা জায়গা উদ্ধার করেন। পাশাপাশি সংসার চালানোসহ ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন তিনি। সকাল থেকে রাত অবধি দোকানে সময় দিতে হয় তাকে। দোকানে রয়েছে দুইজন কর্মচারীও। মাকে সাহায্য করেন তার দুই সন্তান।
ববিতা সাহা বলেন, স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমাদের জীবনে খাবারের হাহাকার পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে নিজেই দোকান করতে যাই। প্রথমে নানা লোকে নানা মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। দোকানদারি না করলে তিন সন্তান, অসুস্থ স্বামী ও শাশুড়িসহ আমাকে না খেয়ে মরতে হতো। যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে সংসার চালানোসহ ছেলেদের লেখাপড়া করাচ্ছি। এ ছাড়াও অসুস্থ স্বামী ও শাশুড়ির চিকিৎসাও করাতে হচ্ছে। স্বামী যদি সুস্থ থাকত, তাহলে আমার সংসার সুখের সংসার হতো। স্বামীর চিকিৎসার জন্য সমাজসেবাতে আবেদন করেও কোনো অর্থ পাইনি। তাই তার স্বামীর উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছি না।’
ববিতা সাহা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিত্তবানদের কাছে তার অসুস্থ স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান।
এসএইচ