‘বলিউডে এখন সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে সবাই যে হাহুতাশ করছে, আমার জীবনটাও তেমন হতে পারত। চলচ্চিত্রজগতে আমিও অনেক নোংরা পলিটিকসের শিকার হয়েছি। মনোবল শক্ত ছিল, পরিবার পাশে ছিল, তাই হয়তো আত্মহত্যা করিনি। আমার মতো করে লড়ে গেছি। চলচ্চিত্রে জায়গা করে নিয়েছি।’ কথাগুলো বাংলাদেশের একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আমিন খানের।
একসময় শুটিংয়ে অ্যাকশন, কাট শুনে অভ্যস্ত চিত্রনায়ক আমিন খান এখন ব্যস্ত চাকরিজীবনে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় দায়িত্বে আছেন। তিনি এখন সেরকমভাবে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে নেই। স্ত্রী স্নিগ্ধা খান, দুই ছেলে রাইয়ান খান আর মাঈন খানকে নিয়ে বর্তমানে ঢাকার উত্তরায় থাকেন। দুই ছেলে স্কুলে পড়ে। আমিন খান বললেন, ‘চলচ্চিত্রের জীবনটা খুব মিস করি। ওটাই আমাকে নতুন জন্ম দিয়েছে। নায়ক আমিন খান হয়ে বাঁচতে চাই।’
গত শতকের নব্বই দশকে নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রম দিয়ে চলচ্চিত্রে তাঁর শুরু। এই কার্যক্রমে নির্বাচিত হয়েও ফিল্মি পলিটিকসের কারণে দুই বছর কোনো ছবির কাজ করতে পারেননি। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় প্রথম সিনেমা ‘অবুঝ দুটি মন’। মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত এই ছবি মুক্তির আগে বাদল খন্দকারের ‘দুনিয়ার বাদশা’ ছবিতে কাজ করেন। ছবিটি সুপারহিট ব্যবসা করে। এই ছবিই তাঁকে অ্যাকশন ঘরানার আগ্রহী হওয়ার রাস্তা তৈরি করে দেয়, তার আগে মুখোমুখি হতে হয় অনেক ঘটনার।
চাচার উৎসাহে ১৯৯০ সালে এফডিসি আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমে অংশ নেন আমিন খান। সে সময় ২০ থেকে ২২ হাজার প্রতিযোগীর মধ্য থেকে নিজেকে সেরা হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরেন।
সে সময়কার কথা মনে করে আমিন খান বললেন, ‘খুলনা থেকে ঢাকায় আসি। মফস্সল শহর থেকে আসা আমি কাউকে চিনি না, জানি না। একমাত্র অভিভাবক আমার চাচা। তিনিও সিনেমার কেউ নন। ডানে যাব না, বাঁয়ে যাব, কিছুই জানি না। তারপরও অডিশনে টিকে গেলাম। অডিশনের পরই বাংলাদেশের স্বনামধন্য ও প্রভাবশালী একজন পরিচালক আমাকে দিয়ে ছবি বানানোর আগ্রহ প্রকাশ করলেন। প্রতিযোগিতা শেষে ছবির নামও ঘোষণা করলেন, কিন্তু আমাকে নিলেন না। আমি চুপচাপ রইলাম। সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রেখে চলেছি। তা না হলে হয়তো আত্মহত্যা করতাম। এর মধ্যে সে সময় সবচেয়ে মেগা হিট তিনটা ছবির প্রস্তাবও আমার কাছে আসে। কিন্তু পরিচালককে কথা দেওয়ার কারণে ছবিগুলো আমার করা হয়নি। ওই পরিচালকের একজন শিষ্য আমাকে নিয়ে ছবি বানাতে চাইলেন, অজ্ঞাত কারণে তা–ও হলো না! “অবুঝ দুটি মন” করার আগে তিনটা ছবির সাইনিং মানি নিয়েছিলাম। কোনোটিতে কাজ করা হচ্ছে না। এদিকে আমাকে প্রস্তাব দেওয়া ছবিগুলোও মুক্তি পেতে লাগল, মন খারাপ লাগা শুরু হলো। বুঝে গেছি, পলিটিকসে পড়ে গেছি। চাচার সঙ্গে ইস্কাটনে থাকতাম। লজ্জায় বাড়িতেও যেতে পারতাম না। দুই বছরে ঈদেও খুলনায় যেতে পারিনি।’
তবে এই কষ্টের সময়ে সে সময়ের সাংবাদিকদের খুব ভালোভাবে পাশে পেয়েছেন আমিন খান। তাঁরা এই আমিন খান নামটিও দেন। সবার কাছে আমিন খান নামে পরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম ছিল আমিনুল ইসলাম খান, ডাকনাম আমিন। ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচিতি অনুষ্ঠানে নামটি দেন তাঁরা।
তবে বাংলাদেশের ছবির কাজে এখনো পেশাদারি মনোভাব গড়ে ওঠেনি বলে মত দিয়েছেন আমিন খান। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশে প্রফেশনালিজমের চেয়ে ইমোশনাল ব্যাপারগুলো কাজ করে বেশি। যাঁর সঙ্গে যাঁর খাতির বেশি, আবদারের সম্পর্ক, তাঁকে দিয়ে কাজ করানো হয় বেশি; যা অনেক বড় একটা অন্তরায়। বলতে পারেন চলচ্চিত্রজগতের পলিটিকস আমার ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বলিউডে এখন সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে সবাই যে হাহুতাশ করছে, আমার জীবনটাও তেমন হতে পারত। চলচ্চিত্রজগতে আমিও অনেক নোংরা পলিটিকসের শিকার হয়েছি। মনোবল শক্ত ছিল, পরিবার পাশে ছিল, তাই হয়তো আত্মহত্যা করিনি। আমার মতো করে লড়ে গেছি। চলচ্চিত্রে জায়গা করে নিয়েছি।’