ভেঙে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ সড়ক, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের শঙ্কা

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে দক্ষিণে টেকনাফে এসে থেমেছে। দুই প্রান্তের মাঝখানের দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার পথের দুই ধারের প্রকৃতি দুই ধরনের। একদিকে সুবিশাল সুনীল জলরাশির ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ। অন্যদিকে, সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। উদার এ প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে পর্যটক টানতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করা হয়।

কিন্তু সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে সেই মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ অংশে ভাঙন ধরেছে। জোয়ার এলেই ছোট-বড় ডজনাধিক স্পটে এ ভাঙন বাড়তে থাকে। এতে পুরো সড়ক তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সকালের জোয়ারে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের পশ্চিম মুন্ডার ডেইল এলাকার প্রায় অর্ধশত মিটার সড়ক ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে গেছে। এর আগে গত দুই দিনের বাড়ন্ত জোয়ারের পানিতে টেকনাফের বাহারছড়া, হাদুরছড়া, দক্ষিণ মুন্ডার ডেইল এলাকায় একাধিক স্পটে মেরিন ড্রাইভ ভাঙনের কবলে পড়ে।

ভেঙে যাওয়া অংশ শিগগিরই মেরামত করা না হলে সড়ক তলিয়ে মেরিন ড্রাইভে টেকনাফ-কক্সবাজার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীরা।

স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে। জোয়ারে বাড়ন্ত পানির তোড়ে সড়ক রক্ষায় ব্যবহার করা জিও ব্যাগ দুর্বল হয়ে নেতিয়ে গেছে। এরই মধ্যে জিও ব্যাগ ডিঙিয়ে সড়কের বেশ কয়েকটি অংশ গ্রাস করছে সাগর।

তাদের মতে, সড়কের অতি নিকটবর্তী এলাকা থেকে বালু তুলে জমি ভরাট ও জিও ব্যাগ ভরাট করায় সাগরে সামান্য পানি বাড়লেই সড়ক ভাঙনের কবলে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা নোমান হাশেমী বলেন, এর আগে কখনো এভাবে ভাঙন ধরেনি মেরিন ড্রাইভে। সাগরের ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ঢেউ বড় হয়ে এসে আঁচড়ে পড়ছে মেরিন ড্রাইভে। জিও ব্যাগ টপকে ঢেউগুলো সড়কে ওঠায় সড়কটি ভাঙনের কবলে পড়েছে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে মেরিন ড্রাইভের বেশ কয়েকটি স্পটে ব্যাপক ভাঙন ধরেছে। অন্যবারের তুলনায় এবারের ভাঙন আশংকাজনক।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরের জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এ বাড়ন্ত পানির তোড়ে মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ অংশের কয়েকটি স্পটে ভাঙন ধরেছে। ভাঙন রোধে এরইমধ্যে সেনাবাহিনী কাজও শুরু করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে এ সমস্য সমাধান হবে।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ৬ মে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তবে ১৯৯১-৯২ সালে এ সড়ক প্রকল্পটি গ্রহণের পর থেকেই নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীন হলেও নির্মাণ তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোর। নয়নাভিরাম সড়কটি দেশের পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *