টাঙ্গাইলের টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়া

রাইসুল ইসলাম লিটন, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: আসছে কোরবানি। কোরবানি শব্দটি আরবি (কুরব) ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ নৈকট্য বা সান্নিধ্য। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আত্মোৎসর্গ করাই কোরবানি। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার নামে পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট কিছু হালাল পশু জবাই বা কোরবানি করা হয়। আর এই ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা। টুংটাং শব্দই বলছে ঈদ লেগেছে কামার পাড়ায়। দিন রাত চলছে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি ও শানের কাজ। নাওয়া খাওয়া ভুলে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।

টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার বাজার বা কামাড় পাড়া ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যন্ত জনপদের কামাররা এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। লাল আগুনের লোহায় কামারদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার দোকানগুলো। টুংটাং শব্দটি এখন তাদের জন্য এক প্রকার ছন্দ।

জানা যায়, শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছেন কামাররা। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আজাহাকে সামনে রেখে জমে উঠে তাদের এই হস্ত শিল্প।

কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাজারের কামার শিল্পী অনিল কর্মকার জানান, সারা বছর এই কোনবানির ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এ সময়টিতে যারা কোরবানির পশু জবাই করেন তারা প্রত্যেকে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টিতে কাজ বেশি হওয়ার কারনে লাভও বেশি হয়। তবে লোহা আর কয়লার দাম বেশি থাকায় মজুরিও একটু বেশি নিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমাদের পরিচিত কিছু গ্রাহক দা, বটি, ছুরি বানানোর অর্ডার দিয়ে গেছে এবং শাণ দেয়ার অর্ডার পেয়েছি। পাশাপাশি নতুন বটি, ছুরি তৈরি করছি। বিশেষ করে কোরবানির ৩-৪ দিন আগে গ্রাহকের আনাগোনা আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

কামার শিল্পী অনিল, উজ্জল ও সুদেপ কর্মকার জানান, একসময় তাদের বেশ কদর ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। তাই সারা বছর তেমন কোন কাজ থাকেনা। তবে ধান কাটার মৌসুম ও কোরবানি উপলক্ষে তাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় তাদের দৈনিক ১০০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হলেও, ব্যয় বাদে তাদের হাতে থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

তারা আরও জানান, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মূলত কিছু কামার এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছেন। এছাড়া পরিশ্রমের তুলনায় এ পেশায় সাধারণত আয় ও সম্মান উভয়ই কম। তাই অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

তারা এ পেশার ভবিষ্যত নিয়েও এখন চিন্তিত, কারণ এ কাজের সময় আওয়াজ হয় বলে শহরে তেমন কেউ তাদের দোকান ভাড়া দিতে চায় না। আগামীতে এ পেশা টিকিয়ে রাখা খুব কষ্ট হয়ে পড়বে বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।

কামারি অনিল কর্মকার জানান, এই এক মাসের কাজের উপর তাদের পরিবারের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া জামা-কাপড় সহ বছরের খোরাকি নির্ভর করে। যদিও কামার শিল্পের আনুসাঙ্গিক কয়লা ও লোহার দাম লাগামহীন ভাবে উঠানামা করতে থাকে। তাই কামাররা বাপ-দাদার এ পেশাকে ধরে রাখতে কয়লা ও লোহার দাম নিয়ন্ত্রণ ও সহজ শর্তে ঋনের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।

ক্রেতা শাজাহান মিয়া ও ফরিদ জানান , কামাররা দেশিয় প্রযুক্তিতে লোহা আগুনে গরম করে পিটিয়ে তৈরি করেন দা, ছুরি তৈরি করেন। এখানে নিজেদের সুবিধা মত ওইসব জিনিস তৈরি করা যায়। সেগুলো খুব টেকশই হয়।

এসএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *