নজর২৪ ডেস্ক- বুক পাটে তু মুখ পাটে না/এইত নারীর মন/লজ্জা শরম আসল কতা/কইরো সংরক্ষণ- এটা কোনো কবির লেখা ছড়া নয়। নেত্রকোনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক যুবক রিপন মিয়ার নিত্য ছন্দ। নিজে এরকম ছোট ছোট ছন্দ তৈরি করেন এবং ফেসবুকে এসে ভিডিওতে সেসব বলেন। রিপনের এসব ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ভিডিও। পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘রিপন ভিডিও’ নামে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় কয়েকটি নামের একটি হলো ‘রিপন ভিডিও’। তাকে চেনেন না অথচ ফেসবুকে সক্রিয় এমন নেটিজেন পাওয়া দুষ্কর।
মো. রিপন মিয়া পেশাগত জীবনে একজন কাঠমিস্ত্রী। সবকিছু ঠিক ঠাক চলছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণের ঢেউয়ে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে রিপনের জীবনে। কাঠমিস্ত্রীর কাজ বন্ধ গত ৬/৭ মাস ধরে। তার ঘরে এখন খাবার নেই।
সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় তার মাকে নিয়ে হাজির হন রিপন। সেখানে তিনি তার সংসারের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক দশার কথা বলেন। ভিডিও করার সময় তিনি তার রান্নাঘরে নিয়ে যান ক্যামেরা। সেখানে ভাতের হাঁড়িতে কিছু চাল দেখিয়ে তিনি বলেন, দেখেন বন্ধুরা কয়েকটা চাল আছে। এটাও একজনের কাছ থেকে ধার করে আনা। খুব কষ্টে আছি বন্ধুরা।
এরপর রিপন তার মা’কেও ভিডিওতে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার পোলাডার ভিডিও দিয়া মানুষ কত কত টাকা কামাই করতাছে শুনতাছি, আর আমার পোলার ঘরে চাউল নাই। যারা তারে নিয়া টাকা কামাইতাছে তারা আগাইয়া আইতাছে না। আমাগো এখন একটু সাহায্য দরকার। আমার পোলাডারে একটু সাহায্য করে আপনারা। এখন তো বন্যা। পোলা তো কাজ কাম করতে পারে না এখন। আমরা ডেলি আইনা ডেলি (প্রতিদিন) খাই। লেখাপড়া নাই, কিচ্ছু জানে না। ওরে দিয়া মাইনষে কামাই করতাছে। আপনাদের কাছে এইটাই বলি যে আপনারা একটু আমার পোলারে ভাও কইরা দিয়েন। যেন দুই বেলা ডাইল ভাত খায়া থাকতে পারে।’
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হলে রিপনের গলায় আফসোসের সুর টের পাওয়া যায়। রিপন বলেন, খুব খারাপ অবস্থায় আছি। ভাই ভালো চাকরি তো পাব না, আমার তো লেখাপড়া কম, ভাই ভালো চাকরি তো পাইব না। ভালো চাকরি তো কপালে থাকবে না। তবে মোটামুটি একটা চাকরি হলেই হবে। পিওন-টিওনই হইলে, ইচ্ছা হইলে ফাইলটাইল আগায় দিলাম, এইটা করলাম, ঐটা করলাম। ভালো চাকরি তো থাকবে না। লেখাপড়া বেশি করছি তো তার জন্য (শ্লেষ)!
এরপরই রিপনের ‘ছন্দের’ কী খবর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐটা তো আছেই, ঐটা তো আলাদা প্রতিভা, আমি লেখাপড়া তো জানি না তো, এইটা দিয়ে আমি ইনকাম করতে পারব? আমি তো বিরাট লেখাপড়াওয়ালা লোক, কীভাবে মনিটাইজেশন করে জানি না তো। এজন্য বলছি আমি পারব না।
এরপর রিপনের কাছে প্রশ্ন ছিল, আপনি পিওনের চাকরিটা ঢাকাতেই চান নাকি নেত্রকোনার আশেপাশেই চাকরিটা চান? রিপন এর উত্তরে বলেন, ঢাকায় তো ভাই থাকা খাওয়া খরচ অনেক, যেখানে হোক করতে তো হবেই, আপনি ধরেন ৫ হাজার টাকা দিবেন, সেইটা দিয়ে আমি কয়দিন চলব বলেন।
ভাইরাল ভিডিওতে রিপন বলেন, আমার এই ভিডিওটা কেউ শেয়ার করবে না। আজকে একটা মেয়ে নিয়ে বা একটা ছন্দ নিয়ে যদি ভিডিও আপলোড করতাম তাহলে সবাই ঠিকই শেয়ার করত।