সাইফুল ইসলাম মুকুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রংপুর: রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের ৪০ নম্বর (নেফ্রোলজি) ওয়ার্ডের বাথরুম থেকে ছয়টি দরজা চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গত শনিবার ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ মোর্শেদা বেগমসহ ১৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যাদের কারণ দর্শানো হয়েছে তারা হলেন, মোর্শেদা বেগম (ইনচার্জ), সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা খাতুন, নুরেস্তা বেগম, আশুরা খাতুন, আন্না রানী সাহা, মোখলেছুর রহমান, হাসিনা আক্তার, তাপসী রানী, শামীমা আক্তার, পারভীন বেগম এবং চুক্তিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী শামীম, ময়নুল ও শাহরিয়ার।
রমেক হাসপাতালের পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মজিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর ওই নোটিশে বলা হয়েছে, গত ১১ মার্চ হাসপাতালের ৪০ নম্বর (নেফ্রোলজি) ওয়ার্ডের বাথরুম থেকে ৬টি দরজা চুরি হয়ে যায়। হাসপাতালে নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের কর্তব্যকালীন সময়ে এভাবে দরজার কবজি খুলে দরজা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অভূতপূর্ব, অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং যোগসাজশসহ কর্তব্যে চরম অবহেলার প্রমাণ বহন করে। এমতাবস্থায় চুরি যাওয়া দরজাগুলো আপনাদের নিজ খরচে রিপ্লেসমেন্ট করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো এবং একই সঙ্গে কর্তব্যে অবহেলার কারণে কেন আপনাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না-আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তার লিখিত জবাব দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ব্যস্ততম নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে নিরাপত্তা প্রহরী আছে। সেখানে সবসময়ই রোগী ও তাদের স্বজনদের আনাগোনা রয়েছে। এসবের মধ্যে ওই ওয়ার্ডের ৬টি দরজা চুরি ঘটনাটিকে রহস্যজনক মনে করছেন সবাই। যদিও অভিযুক্তরা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হয়নি। এমন ছোটখাটো চুরির ঘটনা নিত্যদিন ঘটলেও হাসপাতালের বিভিন্ন পয়েন্টে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) এখনও স্থাপন না করায় রোগীর স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
রমেক হাসাপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় তলার ৪০ নম্বর (নেফ্রোলজি) ওয়ার্ডে বাথরুমে সম্প্রতি স্থাপন করা ৬টি দরজা (রেডিমেট সলিট ডোর) এবং নিচ তলার পেছন দিকে স্থাপন করা জানালার থাইগ্লাস জানালা কে বা কারা চুরি করেছে। যা সম্প্রতি হাসপাতাল প্রশাসনের নজরে এসেছে।
এদিকে আনসার সদস্যরা পাহারায় থাকার পরও চুরি হওয়ায় রোগীর স্বজনরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন রোগী বলেন, কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে আছি। প্রায়ই কারও না কারও মোবাইল ফোন হারানোর খবর পাচ্ছি। মোবাইল ফোন ছোট এ কারণে হয়তো যে কেউ সহজে পকেটে বহন করতে পারে। কিন্তু নিরাপত্তা প্রহরী থাকার পরও বাথরুমের দরজা খুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি অবাক করার মতো। এটি চুরি না ডাকাতি_ তিনি প্রশ্ন করেন। হাসপাতালের ভবন নির্মাণসহ সংস্কারের কাজ করে গণপূর্ত বিভাগের নিয়োজিত ঠিকাদার।
এ বিষয়ে জানতে রমেক হাসপাতাল চত্বরে অবস্থিত গণপূর্ত উপ-বিভাগ-২ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাকিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে চলমান কাজের অংশ হিসেবে ১৫টি সলিড ডোর এবং নিচ তলায় ২১টি থাইগ্লাস জানালা স্থাপন করা হয়। চলমান কাজে এখনও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাকা পায়নি। এরই মধ্যে ছয়টি দরজা ও থাইগ্লাস জানালা চুরির ঘটনাটি ঘটেছে। এসব দরজার একেকটির মূল্য ১২ হাজার টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা। এছাড়া থাইগ্লাসের জানালাগুলো স্থাপন করা পর্যন্ত একেকটিতে খরচ পড়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা থেকে ১৯ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে হাসাপাতালে চুরির ঘটনা ঘটছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫টির মতো জানালার থাই চুরি হয়েছে। প্রায়ই চালু পানির পাইপ চুরি হচ্ছে। এ কারণে সবসময় পানি দিয়ে ভবনের দেয়াল ভিজা থাকছে। এছাড়াও কোয়ার্টার ভবনের জানালার গ্রিল চুরি অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলীর ফোনে একাধিকার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। উপ-পরিচালক ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি জানার পর ওই ওয়ার্ডে যাদের দায়িত্ব ছিল, তাদেরকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও কেউ নোটিশের জবাব দেয়নি। প্রথমে তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর কথা বলা হলেও পরে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না কারা এই চুরির ঘটনায় জড়িত। তারপরও আমরা শোকজের মাধ্যমে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছি। হাসপাতালে আনসার সদস্য ৬০ জন। এদের অধিকাংশ সকাল শিফটে ডিউটি করে। তাই পরের দুই শিফটে আনসারের সংখ্যা অল্প থাকায় সব ওয়ার্ডে ঠিকমতো পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। আবার বাজেট কম থাকায় আনসার সদস্য বৃদ্ধি করাও আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। সম্পূর্ণ হাসপাতাল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
এসএইচ