চরম মানবিক সংকট সৃষ্টির পথে ইথিওপিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফ্রিকার যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশ ইথিওপিয়ার পরিস্থিতি দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে, উত্তরাঞ্চলের তাইগ্রেতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বাহিনীর সাথে আঞ্চলিক সরকারের বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। এতে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজারো মানুষ।

 

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) গতকাল মঙ্গলবার বলেছে, ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ খ্যাত ইথিওপিয়ার পরিস্থিতি একটি পূর্ণ মাত্রায় মানবিক সংকটে রূপ নিচ্ছে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু তাইগ্রে থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে সুদানে আশ্রয় নিচ্ছে।

 

জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র বাবর বেলুচ বলেন, ইথিওপিয়ার তিন সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে ইতিমধ্যে ২৭ হাজারের বেশি মানুষ সুদানে এসেছে। লড়াই থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত হয়ে অল্প কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসতে পেরেছে। ইউএনএইচসিআর অংশীদারদের সঙ্গে সুদানের সরকারকে সাহায্য করছে। প্রয়োজনীয়তা অব্যাহত থাকায় সীমান্তে মানবিক সহায়তা বাড়ানো হয়েছে।

 

ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ৪ নভেম্বর তাইগ্রে অঞ্চলে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। তাইগ্রে অঞ্চলে সরকারি বাহিনীর ওপর স্থানীয় বাহিনীগুলোর হামলার অভিযোগ উঠলে আবি আহমেদ সেখানে জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী পাঠান।

 

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি যুদ্ধবিমান থেকে তাইগ্রেতে সামরিক আস্তানায় বিশেষ করে অস্ত্রের ভান্ডার লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য হলো ৫০ লাখ মানুষের পার্বত্য এই রাজ্যটিতে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। দেশটির তাইগ্রে অঞ্চলের প্রধান রাজনৈতিক দল তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার অভিযোগ করে আসছে, টিপিএলএফ দেশকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করছে।

 

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবি আহমেদ ক্ষমতায় আসার পর আফ্রিকার এই দেশে রাজনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন শুরু করেন। প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দুই দশক ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটে তাঁরই হাত ধরে। ফলে ক্ষমতায় আসার মাত্র এক বছরের মাথায় নোবেল শান্তি পুরস্কার পান আবি।

 

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আবি আহমেদ প্রশংসিত হলেও নিজ দেশের স্বাধীনতাকামী অঞ্চল তাইগ্রেতে শান্তি ফেরাতে তেমন পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ। উল্টো ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারের নামে তাইগ্রের অধিবাসীদের কোণঠাসা করে ফেলেন বলে অভিযোগ ওঠে আবির বিরুদ্ধে। এই ঘটনা ইথিওপিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বজায় রাখা তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট পার্টির সঙ্গে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ উসকে দেয়। শুরু হয় টিপিএলএফের বাহিনীর সঙ্গে ইথিওপিয়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত।

 

গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে আবি আহমেদ সতর্ক করে বলেছেন, টিপিএলএফের সেনাদের অস্ত্র সমর্পণের সময় পেরিয়ে গেছে। সোমবার রাতে একটি টুইট করে তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যাওয়া ইথিওপীয়দের পুনরায় সংহত করার কাজ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *