নজর২৪ ডেস্ক- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা-সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট নাগরিকরা অংশ নেন। এছাড়া ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগও পৃথকভাবে মানববন্ধন করেছে।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মো. ইউনুছ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছিলাম। বাঙালির লাল-সবুজের পতাকা এনে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর। এই দেশ শেখ মুজিবের দেশ, তিনি বাঙালির জাতির পিতা। এই দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে থাকতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি কোনো ধরনের অবমাননা সহ্য করবে না।’
প্রয়াত রাজনীতিক এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহযোদ্ধা ইউনূছ বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মৌলবাদী গোষ্ঠী, যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা লেজ নাড়ছে। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আমি তাদের সাবধান করে দিতে চাই, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় থাকতে হলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে স্যালুট দিয়ে থাকতে হবে, না হয় পাকিস্তানে চলে যেতে পারেন। চরমোনাইয়ের ঘাড়টা একটু বেশি মোটা, তাই সবখানে ধর্ম টেনে আনে। সব জায়গায় ধর্ম টেনে আনলে ঘাড় মটকে দিতে হবে।’
গণজাগরণ মঞ্চ, চট্টগ্রামের সংগঠক আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, ‘আপসকামী আর সহনশীল মনোভাবের কারণে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী জাতির জনকের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলার মতো স্পর্ধা দেখাচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদীদের আস্ফালন দিন দিন বেড়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারা যে হুমকি দিয়েছে, এটা ভয়ঙ্কর। এটার প্রতিবাদ না করলে অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব একদিন বিপন্ন হবে। মৌলবাদীরা লালনের ভাস্কর্য ভেঙ্গেছে। তাদের চাপে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরানো হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মূর্তি ভাঙছে তারা। মৌলবাদীদের আর কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবেনা।’
তিনি বলেন, ‘আমি সরকার এবং এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে কোনো সহনশীলতা দেখানো যাবে না। তাদের সঙ্গে আর আপস নয়। না হলে এরা একদিন আমাদের সকল জাতীয় অর্জন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্থাপনার ওপর আঘাত হানবে। এদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় নিতে হবে। দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি জাতির জনককে নিয়ে ধৃষ্ঠতাপূর্ণ বক্তব্যের পরও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে না নামায় দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করা হয়, যখন জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি আসে, তখন বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অভিন্ন স্বত্ত্বা। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বঙ্গবন্ধুও থাকবে। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত করবে, তাদের আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেব।’
চট্টগ্রামের পাড়া-মহল্লায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে রনি বলেন, ‘দু’জন মাওলানা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ধৃষ্ঠতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তারা ইসলামকে পুঁজি করে রাজনীতি করেন। তাদের একজন চারদলীয় জোটের শরিক একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় একদল উগ্রপন্থী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে হুমকি দিচ্ছে। উগ্রপন্থীদের উদ্দেশে বলতে চাই- এটা চট্টগ্রামের মাটি। এখান থেকে উগ্রবাদ ছড়ালে জিহ্বা মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে।’